খিলাফতে রাশেদা

পূর্বকথা

 

ইসলাম মূলগতভাবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র-ব্যবস্থা।এই রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে বাস্তবে রূপদান করার সুমহান দায়িত্ব পালন করিয়াছেন খোদ ইসলামেরই মহানবী হযরত মুহাম্মাদ(স)। নবুয়্যতের সুদীর্ঘ তেইশ বৎসরে মানুষের সামষ্টিক জীবন সম্পর্কে যেসব আইন-কানুন ও বিধি-ব্যবস্থা অবতীর্ণ হইয়াছে, উহার সবকিছুকেই তিনি বাস্তবায়িত করিয়াছেন পুরাদস্তুর একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায়। শাসন-প্রশাসন, আইন প্রনয়ন, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার কার্য সম্পাদন,রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা বিধান ইত্যাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজই তিনি সম্পাদন করিয়াছেন সেই একই আইন-কানুন ও বিধি-ব্যবস্থার আলোকে। এইভাবে ইসলামি রাষ্ট্র-ব্যবস্থার একটি স্থায়ী বুনিয়াদ তিনি স্থাপন করিয়া গিয়াছেন নবুয়্যতের তেইশ বৎসরেই।

 

মহানবী(স)-র তিরোধানের পর সেই স্থায়ী বুনিয়াদের উপরই গড়িয়া উঠিয়াছে ইসলামের আদর্শ রাষ্ট্র- ব্যবস্থা­- খিলাফতে রাশেদা। হযরত আবূ বকর,হযরত উমর, হযরত উসমান,হযরত আলী(রা)- মহানবী(স)-র এই চার ঘনিষ্ঠ সহচর পরম যত্নে ও মমতায় বিন্যস্ত ও বিকশিত করিয়া তুলিয়াছেন নবুয়্যতি ধারার এই রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে। শুধু তাহাই নহে,ইহার পরিধিকে তাঁহারা সম্প্রসারিত করিয়াছেন আরব উপদ্বীপের সীমানা অতিক্রম করিয়া গোটা ইরান ও রোমান সাম্রাজ্যর বিশাল অঞ্চল জুড়িয়া। বস্তুতঃ মানব জাতির ইতিহাসে একমাত্র এই রাষ্ট্র-ব্যবস্থাই যে স্বর্ণোজ্জল অধ্যায় রচনা করিতে পারিয়াছে, তাহা অকাট্যরুপে প্রমাণিত হইয়াছে। আধুনিক রাষ্ট্র-বিজ্ঞানীরা যত চমকপ্রদ তন্ত্রমন্ত্রই উদ্ভাবন করিয়া থাকুন না কেন, মানবতার কল্যাণ সাধনে নবুয়্যতী ধারার এই খিলাফতের ন্যায় বিপুল সাফল্য কোন পদ্ধতিই আর অর্জন করিতে পারে নাই, ইহা এক ঐতিহাসিক সত্য।

 

দুর্ভাগ্যবশতঃনবুয়্যতী ধারার এই খিলাফত দুনিয়ার বুকে টিকিয়া ছিল মাত্র তিরিশ বৎসর। ইহার পরই রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের অভিশাপ নামিয়া আসিয়াছে গোটা মুসলিম জাতির উপর। জাহিলিয়াতের অন্ধকার যবনিকা ঢাকিয়া দিয়াছে তাহাদের সোনালি ভবিষ্যৎকে। বর্তমানে উহারই জের চলিতেছে মুসলিম জাহানের দেশে দেশে। তদুপরি সাম্প্রতিককালে ইহার সহিত যুক্ত হইয়াছে পশ্চিমের ইহুদী-খৃস্টানদের উদ্ভাবিত গনতন্ত্র নামক একটি নব্য জাহিলিয়াত। ইহার বিষময় পরিণতি গোটা মুসলিম জাহানকে আজ নিক্ষেপ করিয়াছে রাজনৈতিক সংকটের ঘূর্ণাবর্তে। আধুনিক কালের তন্ত্রমন্ত্রগুলি তাহাদের কোন সমস্যার সমাধান করা তো দূরের কথা, বরং নূতন নূতন সমস্যার জন্ম দিয়া গোটা মুসলিম সমাজকে ব্যাধিগ্রস্ত করিয়া তুলিতেছে।

 

এই পরিস্থিতিতে আজ মুসলিম সমাজে ইসলামের আদর্শ রাষ্ট্র-ব্যবস্থা-খিলাফতে রাশেদা সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন অত্যন্ত তিব্রতর হইয়া উঠিয়াছে। মুসলমানদের সকল রাজনৈতিক ব্যাধির একমাত্র নিরাময় যে নবুয়্যতী ধারার খিলাফত, অন্ন কোন তন্ত্রমন্ত্র নয়- এ সত্যটি আজ মুসলিম সমাজের নিকট উদ্ভাসিত করিয়া তোলা একান্ত প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। মহান ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক হযরত মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম(রহ) এই প্রয়োজনের তাগিদেই “খিলাফতে রাশেদা” নামক বর্তমান গ্রন্থটি রচনা করিয়াছেন। এই গ্রন্থে তিনি গতানুগতিক ধারায় ইসলামের চারি খলিফার জীবন-বৃতান্তের উপর খুব বেশি আলোকপাত করেন নাই, বরং তাঁহাদের শাসন-প্রশাসনের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও অনুকরণীয় দিকগুলিই যথাসম্ভব বিস্তৃতরুপে তুলিয়া ধরার প্রয়াস পাইয়াছেন। এই দিক দিয়া বাংলাভাষার খিলাফতে রাশেদা সম্পর্কে ইহা একখানি অভিনব গ্রন্থ।

 

১৯৭৫ সন হইতে ১৯৮০ সন পর্যন্ত গ্রন্থটির দুইটি সংস্করন প্রকাশিত হওয়ার পর গ্রন্থকার নিজেই ইহার নানা অংশ ব্যাপকভাবে পরিমার্জন করিয়াছেন। বর্তমান সংস্করণে মুদ্রণ প্রমাদ্গুলির সংশোধন ছাড়াও ইহাতে অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযোজিত হইয়াছে। ইহাতে গ্রন্থটির সৌকর্য আরো বৃদ্ধি পাইয়াছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস,গ্রন্থটির বর্তমান সংস্করণ বাংলাভাষী পাঠকদের নিকট অধিকতর সমাদৃত হইবে এবং এদেশের দিকভ্রষ্ট জনগণকে সঠিক পথ-নির্দেশ করিতে বিপুল অবদান রাখিবে।

 

মহান আল্লাহ গ্রন্থকারের এই দ্বীনী খেদমত কবুল করুন এবং ইহার বিনিময়ে তাঁহাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দিন, ইহাই আমাদের সানুনয় প্রার্থনা।

 

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

 

চেয়ারম্যান

 

মওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন

 

ঢাকা জুলাই,১৯৯৫

 

খিলাফতে রাশেদা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম (রহ)

book স্ক্যান কপি ডাউনলোড