কর্মপদ্ধতিঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

ভূমিকা

আল্লাহর এই জমিনে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে আল-কুরআন ও আল-হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। চমক লাগানো সাময়িক কোন উদ্দেশ্য হাসিল এর লক্ষ্য নয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য তাই চিরন্তন, শাশ্বত। সমাজের প্রতিটি অন্যায়, জাহেলিয়াত ও খোদাদ্রোহীতার বিরুদ্ধে রয়েছে এর বলিষ্ঠ ভূমিকা। বলাই-বাহুল্য, আধুনিক জাহেলিয়াতের যুগে এর চলার পথ হবে সংগ্রামমূখর। এ কঠিন ও সংগ্রামী পথ স্বাভাবিকভাবেই দাবি করে বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিভিত্তিক বাস্তব পদক্ষেপ। তাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মসূচি রচিত হয়েছে এর উদ্দেশ্য, মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও আন্দোলনের মেজাজকে সামনে রেখে। আর এই কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের জন্যে গ্রহণ করা হয়েছে এক সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি।

কর্মপদ্ধতি বা কর্মকৌশল (strategy) ছাড়া কোন আন্দোলন সফলকাম হতে পারে না। একটা আন্দোলন বা সংগঠনের সফলতার জন্য প্রয়োজন এর কর্মশক্তি, জনশক্তি এবং জনসমর্থনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার। ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, চিন্তাশক্তি, আন্দোলনের পিছনের জনসমর্থন-সবকিছু আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। আর এসব উপাদানকে ফলপ্রসূ এবং কার্যকর খাতে কাজে লাগানোও এক বিরাট আমানত। বাতিলের পর্বতপ্রমাণ ঐশ্বর্য ও কুসংস্কারের উত্তাল তরঙ্গের সামনে মুষ্টিমেয় মর্দে মুমিনের বিজয় আল্লাহ- রাব্বুল আলামীনের খাছ রহমতেই সম্ভব-একথা সত্য। কিন্তু সঠিক কর্মপদ্ধতি অবলম্বন না করে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করলে তা যে আমানতের সুস্পষ্ট খেয়ানত এতেও কোন সন্দেহ নেই। তাই একটি বৈজ্ঞানিক এবং বাস্তবসম্মত কর্মপদ্ধতি ইসলামী আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য।

ইসলামের সাথে অন্যান্য বাতিল মতাদর্শের পার্থক্য শুধুমাত্র দর্শনগত বা তাত্ত্বিক নয়-পদ্ধতিগত দিকেও রয়েছে এর বিরাট পার্থক্য। ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত পথেই বাতিলের অপসারণ ইসলামের কাম্য। এ ব্যাপারে বাতিলের সাথে আপোষের কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতিও অন্যান্য আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি থেকে ভিন্ন। এই চরম সত্যটা আমাদের ভুললে চলবে না। অন্যান্য আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে আপাততঃ সাফল্যের প্রবণতা যেন আমাদের মন মগজকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। আমাদের অন্তরে একথা গেঁথে নিতে হবে যে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির ভিত্তি এবং অন্যান্য আন্দোলনের ভিত্তি কখনো এক হতে পারে না। পর্যালোচনার মাধ্যমে কৌশলগত কিছু দিক হয়ত আমরা গ্রহণ করতে পারি, কিন্ত সব সময় সজাগ থাকতে হবে যেন এই গ্রহণের সময়ও ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক ভিত্তি ও নীতিবোধের উপর কোনরূপ আঘাত না আসে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি একমাত্র রাসূল (সাঃ)-এর অনুসৃত পদ্ধতি। যুগে যুগে ইসলামী রেঁনেসার ইতিহাসলব্দ অভিজ্ঞতা এই কর্মপদ্ধতিকে করেছে সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী। আর এই অভিজ্ঞতার পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী ঐতিহ্য। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শাহাদাতের পবিত্র রক্তের যোজনায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। ইসলামী ছাত্রশিবিরের বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতিও ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি।

কর্মপদ্ধতির কতকগুলো কৌশলগত দিক রয়েছে। এই কর্মকৌশল পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল। তাই এই কর্মকৌশল স্থায়ীভাবে উল্লেখ সম্ভব নয় আর এটা অবাস্তবও। নির্দিষ্টভাবে কর্মপদ্ধতির মোটামুটি দিকগুলো পরিবেশিত হলো। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের আলোকে কর্মীদের মাধ্যমে এবং সর্বোপরি হেকমতের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এইসব কৌশলগত দিকও রপ্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাঁচ দফা কর্মসূচি ও তার বাস্তবায়ন

সংগঠনের একজন আদর্শ কর্মী হতে হলে যেমন প্রয়োজন মজবুত ঈমান, খোদাভীতি, আদর্শের সুস্পষ্ট জ্ঞান, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, কর্মস্পৃহা ও চারিত্রিক মাধুর্য তেমনি প্রয়োজন কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির যথার্থ অনুধাবন। কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত অজ্ঞতা বা জ্ঞানের স্বল্পতা যাবতীয় প্রচেষ্টা নিষ্ফল করে দেয়। ইসলামী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরেরও রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট বাস্তবমূখী কর্মসূচি এবং তা বাস্তবায়নের জন্যে রয়েছে একটি বিজ্ঞানসম্মত কর্মপদ্ধতি। তাই এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে এই কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতি জানতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। এর জন্যে প্রয়োজন বার বার অধ্যয়নের। প্রয়োজন চিন্তা, গবেষণা ও অধ্যবসায়ের প্রয়োগ। কর্মপদ্ধতির সাথে সক্রিয় কাজের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। শুধু তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্য দিয়ে কর্মপদ্ধতির সব কিছু পরিস্কার হওয়া সম্ভব নয়। সক্রিয় ও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা কর্মপদ্ধতির প্রাণশক্তি। তাই আলোচনা-পর্যালোচনার সাথে সাথে তুলনামূলকভাবে পুরাতন ও দায়িত্বশীল কর্মীদের অভিজ্ঞতার আলোকে কর্মপদ্ধতিকে বুঝতে হবে-স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করতে হবে। ইতিহাসলব্ধ জ্ঞান কর্মপদ্ধতিকে করে মার্জিত, সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যুগে যুগে আন্দোলনের যে মেজাজের জন্ম দিয়েছে তা কর্মীদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। তাই ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী ইতিহাসের পটভূমিতে এর কর্মপদ্ধতি অধ্যয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নিম্নে আমাদের পাঁচ দফা কর্মসূচির বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো। যারা এ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে সংগঠনের কর্মী হিসেবে নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে চান তাদেরকে এটা বুঝতে হবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে।

প্রথম দফা কর্মসূচি : দাওয়াত

“তরুণ ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছিয়ে তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।” এ দফায় তিনটি দিক রয়েছে:

প্রথমত :- তরুণ ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছিয়ে দেয়া অর্থাৎ ইসলামের ব্যাপক প্রচার।

দ্বিতীয়ত :- ছাত্রদের মাঝে ইসলামী জ্ঞান অর্জনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।

তৃতীয়ত :- ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার জন্যে ছাত্রদের মধ্যে দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।

এ তিনটি দিকের কাজ হলেই আমাদের বুঝতে হবে প্রথম দফার কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে। সংক্ষেপে এ দফাকে ‘দাওয়াত’ বলা হয়। নিন্মে এ দফার করণীয় কাজগুলো উল্লেখ করা হলো :

  • ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ও সম্প্রীতি স্থাপন
  • সাপ্তাহিক ও মাসিক সাধারণ সভা
  • সিম্পোজিয়াম, সেমিনার
  • চা-চক্র, বনভোজন
  • নবাগত ও কৃতি ছাত্র সংবর্ধনা
  • বির্তক সভা, রচনা এবং বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও সাধারণ জ্ঞানের আসর
  • পোষ্টারিং, দেয়াল লিখন, পরিচিতি ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাময়িকী বিতরণ।
  • ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি প্রভৃতি বিতরণ।

ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ও সম্প্রীতি স্থাপন :

দাওয়াতী কাজের সর্বোত্তম পন্থা হলো ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস, গ্রাম ও মহল্লা থেকে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে এ পন্থায় কাজ করতে হবে। এরই নাম টার্গেট নির্ধারণ। ছাত্র বেছে নেবার সময় নিম্নোক্ত গুণাবলীর প্রতি নজর রাখা উচিত।

(১) মেধাবী

(২) বুদ্ধিমান ও কর্মঠ

(৩) চরিত্রবান

(৪) নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন

(৫) সমাজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী।

ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের জন্যে নিম্নোক্ত পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন:-

(ক) পরিকল্পনা

টার্গেটকৃত ছাত্রকে অগ্রসর করে নেয়ার জন্য একটি বাস্তব পরিকল্পনা থাকা চাই। তা প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য হতে পারে। পরিকল্পিত কাজ করলেই সাক্ষাৎকারী একজন ছাত্রের চিন্তার পরিশুদ্ধির জন্য যথার্থ চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পায়। অনেকগুলো ছাত্রকে একসাথে টার্গেটের আওতায় না এনে সুযোগ এবং সামর্থ অনুযায়ী কমসংখ্যক ছাত্রের উপর অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

(খ) সম্প্রীতি স্থাপন

ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যার কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে হবে তার সাথে পূর্বেই সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এমন এক আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন সে সাক্ষাৎকারীকে তার শুভাকাংখী হিসেবে বিশ্বাস করতে পারে।

(গ) ক্রমধারা অবলম্বন

প্রথম সাক্ষাতেই মূল দাওয়াত পেশ না করে ক্রমান্নয়ে এ কাজ সুসম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে বন্ধুত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে এমন এক পর্যায়ে আনতে হবে যাতে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত হয়। একে অন্যের কল্যাণকামী হয়। প্রথমত : টার্গেটকৃত ছাত্রের মন-মগজে প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণার অসারতা বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলে ধরতে হবে। দ্বিতীয়ত : আখেরাত তথা পরকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে এবং যাবতীয় সমস্যার সমাধানে ইসলামের সুমহান আদর্শের কার্যকারীতা তুলে ধরতে হবে। ইসলাম সংক্রান্ত তার যাবতীয় ভুল ধারণা দূর করে এর প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামের অনুশাসনগুলির (ইবাদত) প্রতি পরোক্ষ এবং কোন কোন সময় প্রত্যক্ষভাবে সজাগ করতে হবে। তৃতীয়তঃ তাকে ইসলামী আন্দোলনের ও সাংগঠনিক জীবনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবন, সাহাবায়ে কেরামদের জীবনের ঘটনাবলী, যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলন সৃষ্টিকারী মহৎ ব্যক্তিদের জীবনীর মাধ্যমে তাকে আন্দোলন ও সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে। এ পর্যন্ত কৃতকার্য হলে পরবর্তী পর্যায়ে তাকে প্রত্যক্ষভাবে সংগঠনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাতে হবে। দাওয়াতী কাজের এটাই স্বাভাবিক পন্থা।

 (ঘ) যোগাযোগকারীর বৈশিষ্ট্য

যোগাযোগকারীকে নিম্ন লিখিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে। কম কথা বলা। অত্যাধিক ধৈর্যের পরিচয় দেয়া। বেশি কথার পরিবর্তে চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে প্রভাব সৃষ্টি করা। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও স্পষ্ট ধারণা রাখবেন। কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ব্যক্তিত্ব

অক্ষুন্ন রেখে সময় নেবেন। গোজামিলের আশ্রয় না নেয়া। যার সাথে সাক্ষাত করা হচ্ছে তার মন-মানসিকতার দিকে লক্ষ্য রাখা। যোগাযোগকৃত ছাত্রের রোগ দূর করার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করা। তার দুর্বলতার সমালোচনা না করে সৎ গুণাবলী বিকাশে সহযোগিতা করা। ব্যবহারে অমায়িক হওয়া। তার সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া। মনকে অহেতুক ধারণা থেকে মুক্ত রাখা।

সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একসংগে ভ্রমণ, একত্রে নাস্তা করা, খাওয়া, নিজ বাসায় নিয়ে আসা, তার বাসায় যাওয়া, উপহার দেওয়া ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করা।

(ঙ) ক্রমান্বয়ে কর্মী পর্যায়ে নিয়ে আসা

একজন ছাত্রকে শুধু আদর্শ,আন্দোলন ও সংগঠনের দাওয়াত দিলেই চলবে না। তাকে ক্রমান্বয়ে কর্মীপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য চাই কাজ, এজন্য প্রয়োজন কর্মীর। একজন সমর্থককে কর্মীরূপে গড়তে হলে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছাড়াও নিন্মোক্ত উপায়গুলো কাজে লাগাতে হবে :

(১) সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আগ্রহী করতে হবে।

(২) সাধারণ সভা, চা-চক্র ও বনভোজনে শামিল করতে হবে।

(৩) ছাত্রদের জ্ঞান, বুদ্ধি, আন্তরিকতা, মানসিকতা ও ঈমানের দৃঢ়তা লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবেই বই পড়াতে হবে।

(৪) বিভিন্ন ইবাদতের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।

(৫) সময় সময় মন মানসিকতা বুঝে তাকে ছোট-খাট কাজ দিতে হবে।

(৬) ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণে অভ্যস্ত করাতে হবে।

এছাড়াও মসজিদে, কেন্টিনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা, সাহিত্যসভা, বিতর্কসভা ইত্যাদি সমাবেশে ছাত্রদের মধ্যে দাওয়াত দানে সচেষ্ট থাকতে হবে। অর্থাৎ দাওয়াত কখনও সরাসরি হবে, কখনও হবে পরোক্ষভাবে।

মুসলমান একটি মিশনারী জাতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমান জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর দ্বীনের পথে মানুষকে ডাকার জন্য। মুসলমানদের জীবনের এটাই একমাত্র মিশন। যতদিন মুসলমানরা দুনিয়ার বুকে এই দায়িত্ব পালন করেছিল ততদিন তারাই ছিল দুনিয়ার বুকে নেতা, আর যখনই তারা এই দায়িত্ব পালনে গাফেল হল তখনই তাদের উপর নেমে এল লাঞ্ছনা। তাই আল্লাহর জমীনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বকেই আমাদের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

সাপ্তাহিক সাধারণ সভা

নিয়মিত কাজের মধ্যে সাপ্তাহিক সাধারণ সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে এক জায়গায় জমায়েত হওয়ার মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞানার্জন ছাড়াও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। সপ্তাহে প্রতিটি কর্মী যতজন ছাত্রের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছায় তাদেরকে এ সভায় দাওয়াত দিতে হয়। এতে করে যোগাযোগকৃত ছাত্রদের মধ্যে সাংগঠনিক ও সমষ্টিগত জীবনের অনুভুতি জাগ্রত হয়। এ সভাগুলো হচ্ছে প্রচারধর্মী। এগুলো সমষ্টিগতভাবে দাওয়াতী কাজ করার ফোরাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও সভায় বক্তৃতা ও কুরআনের অংশ বিশেষ অর্থসহ পেশ করার মাধ্যমে কর্মীদের যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সাপ্তাহিক সাধারণ সভার কার্যসূচী নিম্নরূপ হওয়া উচিত।

অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত

বিষয় ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা

সভাপতির ভাষণ/ বক্তব্য

মাসিক সাধারণ সভা

প্রতিমাসে একটি করে মাসিক সাধারণ সভার আয়োজন করাও আমাদের নিয়মিত দাওয়াতী কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। সংগঠনের প্রাক্তন কোন কর্মী, অভিজ্ঞ যে কোন কর্মী বা ব্যক্তি, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর এতে আলোচনা পেশ করবেন।

 এর কার্যসূচী নিম্নরূপে হবে

ব্যাখ্যাসহ কুরআন তেলাওয়াত

নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বক্তৃতা

সংগঠনের পরিচয় পেশ

সভাপতির বক্তব্য

পরিচিতি বিতরণ

এ সভায় বেশি সংখ্যক নতুন ছাত্র উপস্থিত করার চেষ্টা করা প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব।

সিম্পোজিয়াম

উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতিক্রমে কোন উপলক্ষকে সামনে রেখে সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা যেতে পারে। কোন হলে বা অডিটোরিয়ামে যে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একজন বিশিষ্ট বক্তার দ্বারা বক্তৃতার আয়োজন করা যেতে পারে। সিম্পোজিয়ামকে আকর্ষণীয় ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এতে ছাত্র ছাড়াও উৎসাহী যে কোন ব্যক্তিই থাকতে পারেন। সিম্পোজিয়ামের কার্যসূচী সাধারণত নিন্মরূপ :

অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত

নির্ধারিত বিষয়ের উপর বক্তৃতা

প্রশ্নোত্তর

সংগঠনের পরিচয় পেশ

সভাপতির ভাষণ

সেমিনার

কেন্দ্রীয় সংগঠনের অনুমতিক্রমে বৎসরে একবার অথবা দু’বার উপযুক্ত পরিবেশ ও সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবন, বিভিন্ন সমস্যার ইসলামী সমাধান ইত্যাদি বিষয়ের উপর সেমিনার করা যেতে পারে। একটি বিষয়ের বিভিন্ন দিকের উপর কয়েকজন বক্তা এতে বক্তৃতা করবেন। এজন্য চিন্তাশীল ও সুযোগ্য বক্তা প্রয়োজন। ইসলামী প্রজ্ঞা সম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে সভাপতি মনোনীত করতে হবে। সেমিনারের কর্মসূচি সাধারণত নিম্নরূপঃ

অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত

উদ্বোধনী বক্তব্য

প্রবন্ধ উপস্থাপন

প্রবন্ধের উপর আলোচনা

সভাপতির বক্তব্য

বি. দ্র. সেমিনারে এক বা একাধিক অধিবেশন হতে পারে।

চা-চক্র

দাওয়াতী কাজের জন্য এটা একটা আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম। অনুষ্ঠানের বৈচিত্র ও আনন্দঘন পরিবেশে ছাত্র সমাজের কাছে আন্দোলনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। টার্গেটকৃত ছাত্রদেরকে এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রত্যেক কর্মীকে চা-চক্রের খরচ নির্বাহের জন্য নির্ধারিত হারে আর্থিক সহযোগীতা দিতে হয়। আমন্ত্রিতদের কেউ আগ্রহ করে আর্থিক সহযোগীতা দিতে চাইলে নেয়া যেতে পারে। চা-চক্রের জন্য নিরিবিলি কোন জায়গা বেছে নেয়া প্রয়োজন। স্মরণ রাখতে হবে নতুন ছাত্রদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যেই চা-চক্রের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের উর্ধ্বতন দায়িত্বশীল ব্যক্তির আগমনকে উপলক্ষ্য করেও চা-চক্রের আয়োজন করা যেতে পারে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র সংসদ কর্মকর্তাদেরও এরূপ চক্রে দাওয়াত দেয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পরিবেশ গুরু-গম্ভীর হয়ে না পড়ে অথবা মাত্রাতিরিক্ত হালকা না হয়। চা-চক্রের কার্যসূচী নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয় :

তেলাওয়াতে কুরআন

পারস্পরিক পরিচয়

কবিতা, আবৃতি, হামদ, নাত, শিক্ষণীয় কোন ঘটনার উল্লেখ ইত্যাদি।

প্রশ্নোত্তর

সভাপতির বক্তব্য

আপ্যায়ন

সমাপ্তি ঘোষণা

বনভোজন

ছাত্রদের পাঠ্য জীবনের একঘেঁয়েমি দূর করার জন্য এ ধরণের কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বনভোজনে আনন্দ লাভের সাথে সাথে ইসলামী পরিবেশও উপভোগ করা যায়।

বনভোজনের জন্য শহরের উপকণ্ঠে অথবা গ্রামের কোন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে অথবা ঐতিহাসিক কোন স্থানে যাওয়ার প্রোগ্রাম নিতে হবে। পূর্বাহ্নেই বনভোজনের তারিখ, বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব বন্টন, ডেলিগেট ফির পরিমান, একত্রিত হওয়ার সময় ও স্থান, রওয়ানা হবার সময় ইত্যাদি নির্ধারণ করে নিতে হবে। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে কর্মসূচি জানিয়ে দিতে হবে। কর্মসূচির মধ্যে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, রশি টানাটানি, সাঁতার কাটা, গ্রুপ ভ্রমণ, বিভিন্ন শিক্ষামূলক আসর ইত্যাদি থাকবে। মনে রাখতে হবে উদ্যোক্তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে পরিবেশকে আনন্দময় সুশৃঙ্খল এবং শিক্ষামূলক করে তোলার উপরেই প্রোগ্রামের সাফল্য নির্ভর করে।

নবাগত ও কৃতিছাত্র সংবর্ধনা

প্রতিষ্ঠানে নবাগত ছাত্রদের সংবর্ধনা প্রদান এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তসহ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করা প্রয়োজন। সংবর্ধনার কর্মসূচি নিম্নরূপ-

অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত

হামদ/নাত/দেশের গান

কৃতি শিক্ষার্থীর বক্তব্য

শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বক্তব্য

বিশেষ অতিথির বক্তব্য

প্রধান অতিথির বক্তব্য

ক্রেষ্ট-পুরস্কার বিতরণ

সভাপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপন

বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতা

রাসুল (সাঃ) এর সীরাত গ্রন্থ, সাহাবাদের জীবনী এবং বিষয়ভিত্তিক বই নির্ধারণ করে গ্রুপ ভিত্তিক সীরাত পাঠ ও বই পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন বিষয়ের উপর রচনা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, বিতর্কসভা, এবং সাধারণ জ্ঞানের আসরসহ ছাত্রদের আদর্শিক জ্ঞান, সাহিত্য ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশের জন্য আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর উপর আকর্ষনীয় প্রতিযোগিতা রাখতে হবে। প্রতিযোগিতায় পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকাটা উত্তম। প্রতিযোগিতার নিয়ম-কানুন পূর্বেই জানিয়ে দিতে হবে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত আক্রমন, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ ও যেনতেন প্রকারে প্রতিক্ষপকে পরাজিত করার মনোভাব পরিত্যাজ্য এবং প্রতিপক্ষ্যের উন্নত যুক্তির নিকট নিজের যুক্তি সমর্পনের মানসিকতা থাকতে হবে।

পোষ্টারিংদেয়াল লিখনপরিচিতি ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাময়িকী বিতরণ

সময় সময় বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে শিবিরের বৈশিষ্ট্য, কর্মসূচি ও দাওয়াতের উপর পোষ্টারিং ও দেয়াল লিখন হতে পারে। এসব দাওয়াতী পোষ্টারিং ও দেয়াল লিখন সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে লেখা প্রয়োজন।

ভর্তি ও পরীক্ষার সময় নবীনদের উদ্দেশ্য অভিনন্দনপত্র এবং পরিচিতি প্রভৃতি ছাত্রদের নিকট বিতরণ করা প্রয়োজন। মাঝে মাঝে গ্রুপে সমষ্টিগত দাওয়াতী কাজ করার সময় পরিচিতি বিতরণ অভিযান চালানো যেতে পারে। শুভাকাড়খী শিক ও বুদ্ধিজীবি মহলেও পরিচিতি পৌঁছান দরকার।

সংগঠন থেকে বিভিন্ন সময়ে সাময়িকী স্মারক ও পত্রিকা প্রকাশ এবং সুষ্ঠু বিতরণের মাধ্যমেও আমাদের দাওয়াত ছাত্রদের কাছে পৌঁছানো যায়। তবে এ ধরণের কিছু প্রকাশ করতে হলে কেন্দ্রীয় সংগঠনের অনুমোদনের প্রয়োজন। এ ছাড়া দাওয়াতী কাজ সম্প্রসারনের লে তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার।

ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি প্রভৃতি বিতরণ

সংগঠন কতৃক প্রকাশিত ও অনুমোদিত ক্যাসেট ও সিডি, ভিসিডি প্রভৃতি বিতরণ করা প্রয়োজন।

এছাড়াও দাওয়াতী কর্মসূচি সমূহ

 গ্রুপ দাওয়াতী কাজঃ

উপশাখাসমূহে গ্রুপ দাওয়াতী কাজ পরিচালিত হবে। এসব দাওয়াতী গ্রুপে কমপক্ষে এমন একজন থাকবেন যিনি কুরআন হাদিসের আলোকে ছাত্রদের নিকট গ্রহণযোগ্য উপায়ে সংগঠনের আহবান পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।

দাওয়াতী গ্রুপ প্রেরণ।

কাজ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এলাকায় বিভিন্ন শাখা থেকে সুবিধাজনক সময়ে এক বা একাধিক দাওয়াতী গ্রুপ প্রেরিত হবে। যে এলাকায় গ্রুপ প্রেরণ করা হবে পূর্বেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের আয়োজন করা হবে।

দাওয়াতী সপ্তাহ ও পক্ষঃ

বছরের সুবিধাজনক সময়ে কেন্দ্র থেকে এই সপ্তাহ বা পক্ষ ঘোষিত হয়। সাধারণ ও স্কুল দাওয়াতী সপ্তাহ হিসেবে পৃথক পৃথক সপ্তাহ বা পক্ষ ঘোষণা হয়ে থাকে। একযোগে সকল শাখা পূর্ব পরিকল্পিত উপায়ে এই সপ্তাহ বা পক্ষ পালন করবে। কোন শাখা নির্দিষ্ট সময়ে সপ্তাহ পালনে অপারগ হলে কেন্দ্র থেকে অনুমতি নিয়ে নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে এ কর্মসূচি পালন করতে হবে। এ সপ্তাহে এলাকার সকল ছাত্রের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিতে হবে। দাওয়াতী সপ্তাহ উপলক্ষে শাখাসমূহ প্রয়োজনীয় দাওয়াতী উপকরণ কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করবে।

মোহররমাদের মাঝে কাজঃ

ইসলামী আন্দোলনের কাজকে মজবুত করার লক্ষ্যে কর্মী ভাইয়েরা তাদের মা-বোন এবং অন্যান্য মোহররমা আত্মীয়দের মাঝে পরিকল্পিত উপায়ে দাওয়াতী কাজ করবেন। মোহররমাদের মাঝে কাজের রিপোর্ট আলাদা ভাবে প্রদান করতে হবে।

মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতী কাজঃ

এলাকার মসজিদকে কেন্দ্র করে শাখা বা উপশাখাসমূহ দাওয়াতী কাজ করবে। পাঠাগার তৈরি, হাদীস পাঠ, বিভিন্ন দিবস পালন ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক দাওয়াতী কাজকে ফলপ্রসু করা যেতে পারে।

অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে কাজঃ

ইসলাম সাম্য ও ন্যায়ের সৌধের উপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে ইসলাম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই ইসলামের এ সুমহান সৌন্দর্যকে অমুসলিম ছাত্রদের মাঝে তুলে ধরার জন্য যথাযথ পদপে গ্রহন করা প্রয়োজন।

এছাড়া সামার ক্যাম্প, স্প্রীং ক্যাম্পসহ মৌসুম উপযোগী আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম হাতে নেয়া যেতে পারে। যে কোন পরিস্থিতিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে কর্মীদের যোগ দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে করে উক্ত কর্মীর পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে এবং সংগঠন সম্পর্কে সাধারণ ছাত্রদের উৎসুক্য বৃদ্ধি পাবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, জ্ঞান ও বুদ্ধির জগতে আমাদেরকে শীর্ষ স্থানীয় হতে হবে। এজন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভাসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচিঃ সংগঠন

‘যেসব ছাত্র ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত তাদেরকে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ করা।’

সংক্ষেপে এ দফাকে আমরা ‘সংগঠন’ বলে থাকি। যে কোন আন্দোলনেই সংগঠনের প্রয়োজন। সংগঠন বা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কোন আন্দোলনই সফল হতে পারে না। বিশেষ করে সংঘবদ্ধ জীবন ছাড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে সত্যিকারের মুসলমান থাকাটাই সম্ভব নয়। আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন “তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (আলে-ইমরান-১০২) রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে বের হলো সে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেলো।’ ইসলামী আন্দোলনের গোড়া থেকেই আমরা সংগঠনের অস্তিত্ব দেখতে পাই। আজকের এ পঙ্কিল পরিবেশে বাতিলের সর্বগ্রাসী ও চতুর্মূখী হামলার মোকাবেলায় এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্তুতঃ সংগঠন ছাড়া ইসলাম হতে পারে না। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর উদ্ধৃতি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন ‘লা ইসলামা ইল্লা বিল জামায়াত।’ অর্থাৎ সংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই। ইসলামের দাওয়াত পেশ করার পর যেসব ছাত্র আমাদের সাথে এর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত হয়, তাদেরকে আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। অন্তর্ভুক্তির পূর্বে ইসলামী আন্দোলনের সংগঠন হিসেবে শিবিরকে অবশ্যই বুঝতে হবে। অর্থাৎ সংগঠনের উদ্দেশ্য, কর্মসূচি কর্মপদ্ধতি ও সংবিধান সম্পর্কে তার প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে।

আমাদের সংগঠনের সদস্যপদ পার্থিব কোন সম্পদের বিনিময়ে লাভ করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন সংগঠনকে জানা, বুঝা এবং ঐকান্তিকতার সাথে অংশগ্রহণ করা।

তাই আমাদের সংগঠনের কাঠামো সম্পর্কে যে কোন ছাত্রেরই ধারণা থাকা দরকার। শিবিরের সংবিধান অনুযায়ী এতে ‘সদস্য’ ও ‘সাথী’ এই দুই স্তরের কর্মী রয়েছে। তবে সাথী হওয়ার পূর্বে একজন ছাত্রকে আরও দু’টি পর্যায় অতিক্রম করে আসতে হয় তা হলো সমর্থক এবং কর্মী।

কর্মীঃ

যে সমর্থক সক্রিয়ভাবে দাওয়াতী কাজ করেন, কর্মী সভায় নিয়মিতভাবে যোগদান করেন, বায়তুলমালে এয়ানত দেন এবং ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখেন তাকে আমরা কর্মী বলে থাকি। একজন কর্মী সাধারণতঃ নিম্নলিখিত কাজগুলি করবেন :

(১) কুরআন ও হাদীস নিয়মিত বুঝে পড়ার চেষ্টা করবেন।

(২) নিয়মিত ইসলামী সাহিত্য পড়বেন।

(৩) ইসলামের প্রাথমিক দাবিসমূহ মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

(৪) বায়তুলমালে নিয়মিত এয়ানত দেবেন।

(৫) নিয়মিত ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখবেন ও দেখাবেন।

(৬) কর্মীসভা, সাধারণ সভা প্রভৃতি অনুষ্ঠানসমূহে যোগদান করবেন।

(৭) সংগঠন কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।

(৮) অপরের কাছে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবেন।

সাথীঃ

একজন কর্মীকে সংবিধানের ৯ নং ধারায় বর্ণিত শর্তাবলী পূরণ করে ‘সাথী’ হতে হয়। শর্তাবলী হচ্ছে : (১) সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা।

(২) সংগঠনের কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির সাথে সচেতনভাবে একমত হওয়া।

(৩) ইসলামের প্রাথমিক দায়িত্বসমুহ পালন করা।

(৪) সংগঠনের সামগ্রিক তৎপরতায় পূর্ণভাবে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া।

‘সাথী’রা হচ্ছেন সংগঠনের একটি পরিপূরক শক্তি। উপরে বর্ণিত দায়িত্বসমূহ নিষ্ঠার সাথে সুচারুরূপে পালন করে সংগঠনের প্রথম সারিতে (সদস্য পর্যায়ে) পৌঁছা একজন সাথীর নৈতিক দায়িত্ব। সাথী হতে হলে ‘সাথী’ হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় এবং তা কেন্দ্রীয় সভাপতি অথবা তার নিযুক্ত প্রতিনিধির নিকট পাঠাতে হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি বা তার প্রতিনিধি উক্ত কর্মী ‘সাথী হওয়ার উপযুক্ত বিবেচনা’ করলে তখন তাকে সাথী করে নেবেন।

সদস্যঃ

যখন কোন শিক্ষার্থী আমাদের এ সংগঠনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করেন, যখন তিনি তার গোটা সত্বাকে সংগঠনের সাথে মিশিয়ে দেন অর্থাৎ সংবিধানের ৪নং ধারায় বর্ণিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে পূরণ করেন তখন তাকে ‘সদস্য’ বলা হয়। সংবিধান অনুযায়ী শর্তসমূহ হচ্ছে নিম্নরূপ :

(১) সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করা।

(২) সংগঠনের কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির সাথে পূর্ণ ঐক্যমত পোষণ করা এবং তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।

(৩) সংবিধানকে মেনে চলা।

(৪) ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ যথাযথভাবে পালন করা।

(৫) কবিরা গুণাহ থেকে বিরত থাকা।

(৬) শিবিরের লক্ষ্য ও কর্মসূচির বিপরীত কোন সংস্থার সাথে সম্পর্ক না রাখা।

এছাড়াও একজন ‘সদস্য’কে অলিখিত বা ঐতিহ্যগত নিয়ম- শৃঙ্খলাসমূহ মেনে চলতে হয়। সদস্যরাই সংগঠনের মূল শক্তি। একটা ইমারত যেরূপ তার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে, ভিত্তির মজবুতির উপর নির্ভর করে তদ্রুপ গোটা সংগঠন সদস্যদের সম্মিলিত শক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের মধ্যে শিথিলতা আসলে গোটা সংগঠনের উপর স্বাভাভিকভাবেই তার প্রতিক্রিয়া তড়িৎবেগে ছড়িয়ে পড়ে। সদস্যগণই হচ্ছে সংগঠনের আসল প্রতিনিধি। তাদের পরিচয়ই সংগঠনের পরিচয়। ঈমানের অত্যুজ্বল আলোকে তাদেরকে উদ্ভাসিত হতে হয় খোদাভীতির শক্তিতে তাদের বলীয়ান হতে হয়। আখেরাতে সীমাহীন ও অমূলক্ষ্য পুরস্কারের আকর্ষণে তাদের জীবনটাই হয় গতিশীল ও দুর্নিবার। তাদের চারিত্রিক মাধুর্যের মহৎ প্রভাবে সমাজে সৃষ্টি হয় আলোড়ন। সংগঠনের স্বার্থে তাদেরকে ব্যক্তিগত স্বার্থ অকুণ্ঠচিত্তে কোরবাণী করতে হয়। সংগঠনের নির্দেশ যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে আস্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয়, ত্যাগ-তিতিক্ষা অগ্রগামী থেকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়, জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় আল-কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি হিসেবে।

‘সদস্য’ হওয়ার পদ্ধতি সংবিধানের ৫নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে। ‘সদস্য’ হওয়ার জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় সভাপতি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কোন কর্মী ‘সদস্য’ হওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করলে স্থানীয় সভাপতি বা এলাকার দায়িত্বশীল তার মন্তব্যসহ কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পাঠিয়ে দেন। আবেদনপত্র পূরণ করে পাঠানোর কিছুদিন পর কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্দিষ্ট একটি ‘প্রশ্নমালা’ আবেদনকারীর নিকট পাঠান। আবেদনকারী তা পূরণ করে স্থানীয় সভাপতি বা এলাকার দায়িত্বশীলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পাঠিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর করে তাকে সংগঠনের সদস্যভূক্ত করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সাংগঠনিক সুবিধার জন্যই জনশক্তিকে এরূপ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এটি কোন শ্রেণী বিভাগ নয় বরং আদর্শ কর্মী তৈরির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মাত্র।

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে সমস্ত কাজ করতে হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো –

কর্মী বৈঠকঃ

মাসে প্রতিটি উপশাখায় একটি কর্মী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কর্মীদের ব্যক্তিগত মান উন্নয়ন এবং সংগঠনের উন্নতি ও গতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে কর্মী বৈঠক করতে হয়। কর্মী বৈঠকের সর্বোচ্চ সময় ১ ঘণ্টা। কর্মী বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরূপঃ

কার্যসূচীঃ

অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত ১০ মি.

ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, মন্তব্য ও পরামর্শ    ২৫ মি.

পরিকল্পনা গ্রহণ ২০ মি.

কর্ম বন্টন ১০ মি.

সভাপতির বক্তব্য ও মুনাজাত ৫ মি.

সাথী বৈঠকঃ

সাথী শাখাসমূহে প্রতি মাসে একবার সাথী বৈঠক করতে হবে। মাসের শুরুর দিকে বৈঠক করলে ভাল হয়। সাথী বৈঠকের সর্বোচ্চ সময় ২ ঘণ্টা ৩০ মি.। সাথী বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরূপ হবে :

দারসে কুরআন/দারসে হাদীস- ২০ মি.

ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা, মন্তব্য ও পরামর্শ- ১ ঘণ্টা ৫৫মি

শাখার মাসিক রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা- ২০ মি.

শাখার পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্ম বন্টন- ২০ মি.

বিবিধ আলোচনা- ২০ মি.

এহতেছাব, সমাপনী/মুনাজাত- ১০ মি.

সদস্য বৈঠকঃ

সদস্য শাখাগুলোতে নিয়মিত ভাবে মাসে একবার সদস্য বৈঠক করতে হবে। মাসের প্রথম দিকে বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। বৈঠক নিরিবিলি জায়গায় ও প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে করতে হবে। এক্ষেত্রে অযথা সময়কে দীর্ঘায়িত করা অথবা সময়ের কার্পণ্য প্রদর্শন ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেহেতু সদস্যরাই হচ্ছেন সংগঠনের প্রাণ সেহেতু ‘সদস্য বৈঠক’ সুচারুরূপে যথার্থ মেজাজে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে করার উপর কাজের গতিশীলতা নির্ভরশীল। সদস্য বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরুপ :

 কার্যসূচীঃ

দারসে কুরআন বা দারসে হাদীস

বিগত মাসের রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা, মন্তব্য ও পরামর্শ

বিশেষ সমস্যা থাকলে আলোচনা

মাসিক পরিকল্পনা প্রণয়ন

ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা

এহতেছাব

সভাপতির বক্তব্য

দায়িত্বশীল বৈঠকঃ

থানা শাখা, সাথী শাখা, সদস্য শাখা ও জেলা শাখা সমূহ প্রতি মাসে একটি দায়িত্বশীল বৈঠক করবে। দায়িত্বশীল বৈঠকের সর্বোচ্চ সময় ৩ ঘণ্টা হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরূপ হবে :

কার্যসূচী

অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত – ১০ মি.

বিগত মাসের রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ দান – ১ ঘন্টা ৩০ মি.

মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ – ৪০ মি.

বিবিধ আলোচনা – ৩০ মি.

সমাপনী ও মুনাজাত – ১০ মি.

কর্মী যোগাযোগঃ

কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্ক গভীর করা, একে অন্যকে জানা, নিস্ক্রিয় কর্মীকে সক্রিয় করা, সক্রিয় কর্মীকে আরও অগ্রসর করা, ভুল বুঝাবুঝি দূর করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে কর্মী যোগাযোগ করতে হয়। কর্মী যোগাযোগ শিবিরের কার্যালীর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। এজন্যে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

(ক) পরিকল্পনা: দিনে, সপ্তাহে বা মাসে কোন্ কোন্ কর্মীর সাথে যোগাযোগ করা হবে তার পরিকল্পনা থাকতে হবে।

(খ) স্থান ও সময় নির্বাচন: যার সাথে যোগাযোগ করা হবে তিনি কখন সময় দিতে পারেন, আলোচনার জন্য কোন ধরনের স্থান পছন্দ করেন তা জেনে সময় ও স্থান নির্ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, কাউকে কোন কথা বলতে হলে বা কোন কথা শুনতে হলে তিনি যে ধরণের পরিবেশ পছন্দ করেন তা সৃষ্টি করতে হবে।

(গ) ঐকান্তিকতা: যার সাথে যোগাযোগ করা হবে তার ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। তিনি যখন বুঝতে পারবেন যে, যোগাযোগকারী তার শুভাকাংঙ্খী তখন তিনি প্রতিটি কথার গুরুত্ব দেবেন। নির্ভেজাল ঐকান্তিকতাই এ ধরণের মানসিকতা সৃষ্টির সহায়ক।

(ঘ) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আলোচনা: প্রথম তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার প্রতি নজর দিতে হবে। সম্ভব হলে তা সমাধান করতে হবে। কমপক্ষে সঠিক পরামর্শ দিতে হবে এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করতে হবে।

(ঙ) সাংগঠনিক আলোচনা: এরপর তার সাথে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।

(চ) সার্বিক আন্দোলনের আলোচনা: কর্মীর চিন্তার ব্যাপকতা ও দায়িত্বানুভূতি বৃদ্ধির জন্যে আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

(ছ) সালাম ও দোয়া বিনিময়: পরিশেষে পারস্পরিক সালাম ও দোয়া বিনিময় করে বিদায় নিতে হবে।

বায়তুলমালঃ

সংগঠনের কাজ পরিচালনার জন্যে প্রতিটি শাখায় বায়তুলমাল থাকতে হবে। কারণ, বায়তুলমাল সংগঠনের মেরুদণ্ড। আপনা-আপনি বায়তুলমাল গড়ে উঠবেনা। কর্মীদের ত্যাগ ও সক্রিয় প্রচেষ্টার বিনিময়েই তা গড়ে উঠে।

বায়তুলমালের আয়ের উৎস প্রধানত : দুটি। প্রথমত : সংগঠনের কর্মীদের এয়ানত। প্রত্যেক কর্মীকে নির্ধারিত হারে প্রতিমাসে বায়তুলমালে নিয়মিত এয়ানত দিতে হয়। এয়ানতের হার কর্মী নিজেই নির্ধারণ করবেন। আর্থিক কুরবানীর জন্যে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর আহবানকে সামনে রেখেই এ হার নির্ধারণ করতে হবে।

শুভাকাংখীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা আয়ের দ্বিতীয় উৎস। একদিকে দিন দিন শুভাকাংখীদের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে হবে, অপরদিকে কেউ যেন অর্থের বিনিময়ে কোন স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

এছাড়াও যাকাত এবং ওশর বায়তুল মালের আয়ের উৎস হতে পারে। তবে এসব আদায় করার পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে। এ খাতের আয় ব্যয়ের হিসাব স্বতন্ত্রভাবে রাখতে হবে। প্রত্যেক অধঃস্তন শাখাকে নিয়মিতভাবে নির্ধারিত হারে উর্ধ্বতন সংগঠনের মাসিক এয়ানত দিতে হবে, তারপর অন্য কাজ। উর্ধ্বতন সংগঠনকে দুর্বল করে যত কাজই করা হোক না কেন তাতে ফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

মাসিক কর্মী সভায় নিয়মিতভাবে বায়তুলমালের রিপোর্ট পেশ করতে হবে। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি যে কোন সময় বায়তুলমালের যাবতীয় রেকর্ড পরিদর্শন করবেন বা করাবেন।

সাংগঠনিক সফরঃ

সংগঠনের কাজকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে কোন সাংগঠনিক সমস্যা বা জটিলতা দূর করার প্রয়োজনে এবং স্থানীয় কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্যে উর্ধ্বতন সংগঠন থেকে অধঃস্তন শাখাগুলোতে সফর করা হয়। প্রোগ্রাম রাখতে হলে পূর্বেই উর্ধ্বতন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে অনুমোদন নিতে হয়। সফরের ব্যয়ভার সফরকৃত শাখাগুলোকেই বহন করতে হয়।

পরিচালক নির্বাচনঃ

সদস্য শাখা ও সাথী শাখায় প্রতি সেশনের শুরুতে নতুন করে সভাপতি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের সময় সংবিধানের ৩৪ নং ধারায় বর্ণিত পরিচালকের গুণাবলীর প্রতি নজর রাখতে হবে। সভাপতি নির্বাচিত হবার পর কাজের সুবিধার জন্য কর্মীদের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিযুক্ত করবেন। যেমন :

(১) সাধারণ সম্পাদক

(২) বায়তুলমাল সম্পাদক

(৩) অফিস সম্পাদক।

(৪) পাঠাগার সম্পাদক।

(৫) প্রচার সম্পাদক।

(৬) প্রকাশনা সম্পাদক। শাখার অধীনে উপশাখার পরিচালক কর্মীদের পরামর্শক্রমে সভাপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।

পরিকল্পনাঃ

পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করা মজবুত সংগঠনের পরিচয়। পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক নজর রাখতে হবে।

(১) জনশক্তি (শ্রেণী বিন্যাসসহ)

(২) কর্মীদের মান।

(৩) কাজের পরিধি ও পরিসংখ্যানমূলক তথ্য।

(৪) অর্থনৈতিক অবস্থা।

(৫) পারিপার্শ্বিক অবস্থা।

(৬) বিরোধী শক্তির তৎপরতা কর্মী, সাথী বা সদস্যদের বৈঠকে তাদের পরামর্শক্রমে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। মোট কথা পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শকে প্রাধান্য দিতে হবে আর উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমোদনের পরই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত হবে। অধঃস্তন শাখাগুলো মাসিক, দ্বিমাসিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

রিপোর্টিং:

পরিকল্পনা অনুমোদন হওয়ার পর কাজের সুষ্ঠু পর্যালোচনার জন্যে নিয়মিত রিপোর্ট প্রণয়ন অপরিহার্য। রিপোর্টের উপর সামষ্টিক পর্যালোচনা বাঞ্ছনীয়। অধঃস্তন সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে উর্ধ্বতন সংগঠনে রিপোর্ট প্রেরণ করবে।

তৃতীয় দফা কর্মসূচি : প্রশিক্ষণ

“এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান এবং আদর্শ চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ার কার্যকরী ব্যবস্থা করা।”

অর্থাৎ সংঘবদ্ধ ছাত্রদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। একদল ছাত্রকে শুধু সংঘবদ্ধ করলেই আমাদের কাজ শেষ হয় না। প্রকৃতপক্ষে এখানেই আমাদের কাজ শুরু। যারা আমাদের সাথে সংগ্রাম করার প্রতিশ্রুতি দিলেন তাদেরকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও জাহেলিয়াতের তুলনামূলক জ্ঞানার্জনে সাহায্য করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। তাদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে তারা জাহেলিয়াতের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ সাহসিকতা ও যুক্তি প্রয়োগে মোকাবিলা করতে পারেন। এমন প্রশিক্ষণ দেয়া যেন তারা ইসলামকে একমাত্র বাস্তব আদর্শ হিসেবে বুঝতে পারেন এবং পেশ করতে পারেন। তাদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন তারা অনুপম চারিত্রিক মাধুর্যের অধিকারী হতে পারেন। প্রত্যেকে যেন আল-কুরআনের আলোকে নিজেদেরকে গড়ে তুলে জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে এবং বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনে ফলপ্রসূ ভুমিকা পালন করতে পারেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত বাধা বিপত্তির ভিতর দিয়েও যেন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে থাকতে পারেন।

এছাড়াও শরীর চর্চা, খেলাধূলা ও চিত্তবিনোদনমূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করে সংঘবদ্ধ ছাত্রদের দৈহিক ও মানসিক শক্তিসমূহের বিকাশ ঘটাতে হবে। এ দফার সাফল্যজনক বাস্তবায়নের উপরই সংগঠনের শক্তি, সাংগঠনিক মজবুতি, কর্মী ও দায়িত্বশীল তৈরি নির্ভরশীল। নিম্নোক্ত কাজগুলো এ দফায় অন্তর্ভূক্ত :

(ক) পাঠাগার প্রতিষ্ঠা

(খ) ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরণ

(গ) পাঠচক্র, আলোচনা চক্র, সামষ্টিক পাঠ ইত্যাদি

(ঘ) শিক্ষাশিবির, শিক্ষাবৈঠক

(ঙ) স্পীকারস ফোরাম

(চ) লেখকশিবির

(ছ) শববেদারী বা নৈশ ইবাদত

(জ) সামষ্টিক ভোজন

(ঝ) ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ

(ঞ) দোয়া ও নফল ইবাদত

(ট) এহতেছাব বা গঠনমূলক সমালোচনা

(ঠ) আত্মসমালোচনা

(ড) কুরআন তালিম/কুরআন ক্লাস

(ক) পাঠাগার প্রতিষ্ঠা

আমাদের সংগঠন জ্ঞানের রাজ্যে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। যেহেতু এটা একটা আদর্শবাদী আন্দোলন, সেহেতু আদর্শের যথার্থ জ্ঞানের প্রতি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। এ কারণেই যেখানেই সংগঠন রয়েছে সেখানেই কর্মীদেরকে নিজেদের ও অন্যান্যদের আর্থিক সহযোগীতায় একটি পাঠাগার স্থাপন করতে হয়। বই-পত্রের যথার্থ হিসেব, পাঠ্য ও ইস্যুকৃত বইয়ের হিসেব সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে হবে। একজন সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে পাঠাগার পরিচালিত হয়। পাঠাগারকে ক্রমান্বয়ে মজবুত করার জন্য প্রতিমাসেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে বই-পত্র কিনতে হয়।

(খ) ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরণ

 ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর বা এর কোনদিক যথাঃ নামায, রোযা, ঈমান, তাকওয়া, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে কুরআন ও হাদীসের উপর ভিত্তি করে যে সাহিত্য রচিত হয় তা ইসলামী সাহিত্য। আবার ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে যে আন্দোলন সে আন্দোলন সংক্রান্ত যাবতীয় সাহিত্যও ইসলামী সাহিত্য। পাঠাগার থেকে নিয়মিত বই নিয়ে কর্মীদের পড়তে হয়। প্রত্যেক কর্মীর নিকট দাওয়াতী কাজের বইগুলো থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। যে কোন কর্মীকে বই বিতরণের পূর্বে বইটি নিজে পড়ে নিতে হয় যেন যার নিকট বিতরণ করা হল তার সাথে উক্ত বই সম্পর্কে সঠিক আলোচনা করা যায় এবং তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়। মনে রাখা দরকার যে, জ্ঞানই মানুষের চিন্তার পরিশুদ্ধি আনে। তাই যত বেশি নিজে পড়া যায় ও অন্যান্যদের পড়ানো যায় ততই বেশি কর্মী তৈরি হয়। পাঠকের মানসিকতা না বুঝে বই বিতরণ করলে উল্টো ফল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

 (গ) পাঠচক্র

পাঠচক্র মানে কয়েকজন মিলে কোন বই বা বিষয় আলোচনা করে গভীরভাবে বুঝবার চেষ্টা করা এবং পরস্পরের চিন্তার বিনিময় করা। মানুষের চিন্তা ও গ্রহণশক্তি সীমাবদ্ধ। কোন একটি বই বা বিষয় একা একা পড়ে যথার্থ হৃদয়ঙ্গম করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন মানুষের চিন্তা শক্তির সংমিশ্রন। পাঠচক্র থেকে আমরা এ উপকার পেতে পারি। পাঠচক্র চিন্তা ও গবেষণাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়। এতে যুক্তি ও বুদ্ধির দীপ্তি বৃদ্ধি পায়। অপরকে বুঝানোর উৎসাহ ও যোগ্যতা বাড়ে। প্রত্যেক শাখায় পাঠচক্রের আয়োজন একান্ত জরুরী। এক্ষেত্রে পূর্বাহ্নে কেন্দ্রের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। যথার্থ নিয়মনীতি মেনে না চললে পাঠচক্রে তেমন কোন লাভ হয় না। এজন্য চক্রের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়মাবলী মেনে চলতে হয়।

(১) চক্রের সদস্য সংখ্যা পূর্ব নির্ধারিত থাকবে।

(২) প্রতিটি চক্র কমপক্ষে তিন মাস চালু রাখতে হবে।

(৩) চক্রের মাসে অন্তত একটি অধিবেশন হবে।

(৪) অধিবেশন দেড় ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে।

এছাড়াও প্রয়োগ পদ্ধতি হিসেবে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মেনে চলা আবশ্যক-

(ক) সদস্য নির্দিষ্টকরণ: প্রতিটি চক্রের জন্য সমমানের কর্মী বাছাই করতে হবে।

 প্রত্যেকে যেন ঈমান, জ্ঞান, তাকওয়া ও সাংগঠনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমমানের হয়।

(খ) পরিচালক নির্ধারণ: কেন্দ্রীয় সভাপতির প্রতিনিধি পাঠচক্রের পরিচালক হবেন

(গ) বিষয়বস্তু নির্ধারণ: বছরের শুরুতে একটি নির্ধারিত সিলেবাস প্রনীত হবে

(ঘ) লক্ষ্য নির্ধারণ: পূর্বেই পাঠচক্রের লক্ষ্য কি, তা ঠিক করে নিতে হবে। পাঠচক্র চলাকালে লক্ষ্যের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যেন চক্র শেষে লক্ষ্যে পৌঁছা যায়।

(ঙ) অধ্যয়ন: পাঠচক্রের জন্য অধ্যয়ন বিশ্লেষণমূলক হতে হবে।

(চ) নোট: চক্রের সদস্যগণ বই বা বিষয়বস্তুর উপর নোট রাখবেন। এক-যে বই বা

বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করা হল তার শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ। দুই-অধ্যয়নকালে যে সমস্ত প্রশ্ন

মনে জাগে।

(ছ) সময়ানুবর্তিতা।

(জ) মনোযোগ: চক্র চলাকালে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ও সুষ্পষ্ঠভাবে বক্তব্য পেশ করা প্রয়োজন।

(ঝ) সক্রিয় সহযোগিতা: শুধু পরিচালক প্রশ্ন করলেই চলবে না। সদস্যদেরকে

স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রশ্ন করতে হবে। গোটা চক্রকে কার্যকরী করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা

চালাতে হবে।

কার্যসূচীঃ

 উদ্বোধন ৫ মি.

 নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোচনা ১ ঘন্টা

 পূর্বনির্ধারিত বিষয়ের উপর দেয়া কাজ আদায় ২০ মি.

 শেষ কথা ৫ মি.

আলোচনা চক্র (কর্মীদের):

বাছাইকৃত কর্মীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয় ও বইয়ের উপর একজন পরিচালকের অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য নিয়ে আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনাচক্রের সর্বোচ্চ সময় হবে ৪৫ মি.। এতে নিম্নের কার্যসূচী থাকবে :

কার্যসূচী:  

 উদ্বোধন- ৫ মি.

 নির্ধারিত বই বা বিষয়ের উপর আলোচনা- ৩০ মি.

 প্রশ্নোত্তর- ১০ মি.

আলোচনা চক্র (সাথীদের) 

সাথীদের মানোন্নয়ন, কোন বিষয় বা বই অনুধাবন ও পারস্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমে চিন্তার ঐক্যসাধনের লক্ষ্যে বাছাইকৃত সাথীদের নিয়ে সাথীদের আলোচনা চক্র অনুষ্ঠিত হবে। একজন পরিচালকের অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য নিয়ে নির্দিষ্ট বই বা বিষয়ের উপর আলোচনা চক্র হবে।

চক্রের সর্বোচ্চ সময়- দেড় থেকে দুই ঘণ্টা হতে পারে।

কার্যসূচীঃ

 উদ্বোধন- ৫ মি.

 নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোচনা- ১ ঘণ্টা

 নির্ধারিত বিষয়ের উপর দেয়া কাজ আদায়- ২০ মি.

 শেষ কথা- ৫ মি.

সামষ্টিক পাঠঃ  

কুরআন,হাদীস,কোন একটি বই বা তার অংশ বিশেষ সমষ্টিগতভাবে পালাক্রমে পাঠ ও আলোচনা করা মানেই সামষ্টিক পাঠ। এতে কোন বই বা বইয়ের অংশ বিশেষ সহজভাবে বুঝা যায়। ৭/৮ জন সদস্য মিলে অধ্যয়ন করতে হয়। এর কোন ভিন্ন ভিন্ন অধিবেশন হয় না। নতুন কর্মী ও সক্রিয় সমর্থকদের নিয়ে সামষ্টিক পাঠ করা বেশি প্রয়োজন।

সামষ্ঠিক পাঠে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা সময় নেয়া যায়। এর কার্যসূচী নিম্নরূপঃ

কার্যসূচীঃ

 অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত- ৫ মি.

 নির্দিষ্ট বিষয় অথবা বইয়ের উপর আলোচনা- ৪০ মি.

 বিবিধ বিষয়ে আলোচনা- ১৫মি.

(ঘ) শিক্ষা শিবিরঃ

জনশক্তির চরিত্র ও স্বভাব সংশোধন, ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি,ইসলামী জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা,নেতৃত্বের দক্ষতা, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা,কৌশলগত যোগ্যতা বৃদ্ধি,ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ করা,কোন বিশেষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলা ইত্যাদির লক্ষ্যে সময় নিয়ে যে কর্মসূচি তাই শিক্ষা শিবির। আমাদের সাংগঠনিক জীবনে এরূপ শিক্ষা শিবিরের গুরুত্ব অত্যাধিক।

শিক্ষা শিবিরের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করতে হয়। নির্বাচিত জনশক্তিই এতে অংশগ্রহণ করবে। এতে একসংগে থাকা,খাওয়া,নামাজ পড়া,আলোচনা শুনা প্রভৃতি কাজের উপযোগী পরিবেশ প্রয়োজন। শিক্ষা শিবিরের জন্য পূর্বেই উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতি নিতে হয়। এর কার্যসূচী সংগঠনের অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত হয়।

শিক্ষা শিবিরের ধরণ

১. দায়িত্বশীল শিক্ষাশিবির ৫ থেকে ১০ দিন অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ ৫০
২. দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষাশিবির ৭ থেকে ১৫ দিন অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ ১৫-২৫
৩. সাধারণ শিক্ষাশিবির (সদস্য/সাথী) ৩ দিন অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ ১০০ জন হওয়াই বাঞ্ছনীয়

৪. কর্মী শিক্ষাশিবির

ক. স্কুল কর্মীদের (২৪ ঘণ্টা) শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১০০ জন হওয়া বাঞ্ছনীয়।

[বৃহস্পতিবার বাদ আসর শুরু শুক্রবার সন্ধার মধ্যে শেষ]

খ. অগ্রসর কর্মী শিক্ষাশিবির পূর্ণ ২ দিন -১০০ জন শিক্ষার্থী হওয়া বাঞ্ছনীয়।

শিক্ষা বৈঠকঃ

কর্মী বা সক্রিয় সমর্থকদের কাছে ইসলামের যথার্থ পরিচয় তুলে ধরা, ইসলামী আন্দোলনের সঠিক ধারণা ও গুরুত্ব পরিষ্কার করা, কোন বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি বা ধারণা পরিষ্কার করার লক্ষ্যে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার কর্মসূচিই শিক্ষা বৈঠক। নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্ধারিত কর্মী এতে যোগদান করেন। যেখানে কর্মী বেশি সেখানে একাধিক শিক্ষা বৈঠক হতে পারে। সম্ভব হলে প্রতিমাসেই শিক্ষা বৈঠক হওয়া প্রয়োজন।

শিক্ষাশিবির ও শিক্ষা বৈঠকের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা প্রয়োজন :

১. শিক্ষাশিবির ও শিক্ষা বৈঠকের শিক্ষার্থী নির্বাচনে মানের সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখা। (মেধা, অভিজ্ঞতা, বয়স, সাংগঠনিক মান)

২. প্রশিক্ষক নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যক্তির আমল, জ্ঞানের গভীরতা, অভিজ্ঞতা,উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, বক্তব্য উপস্থাপনে কৌশলগত দক্ষতা, সময় ও পরিবেশ অনুধাবনের ক্ষমতা ইত্যাদি গুণের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার।

৩. শিক্ষাশিবির ও শিক্ষা বৈঠককে আলোচনা প্রধান না করে কর্মশালা, ব্রেইন স্টর্ম ও গ্রুপ। আলোচনা জাতীয় হাতে কলমে কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যশীল করতে হবে।

৪. শিক্ষাশিবিরে আলোচনার সংখ্যা কমিয়ে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫. শিক্ষাশিবির ও বৈঠকে আলোচনা বক্তাকেন্দ্রিক না হয়ে অংশগ্রহণ ধর্মী হওয়া প্রয়োজন। আলোচনাকালে শিক্ষার্থীদের অবদান রাখার সুযোগ দিতে হবে।

৬. কমপক্ষে ৩ মাস পূর্বে শিক্ষা শিবির ও ২ মাস পূর্বে শিক্ষা বৈঠকের বিস্তারিত পরিকল্পনা হয়ে যাওয়া দরকার। শিক্ষা শিবিরের কমপক্ষে ২ মাস পূর্বে বক্তা, স্থান ইত্যাদি নিশ্চিত হওয়া, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বিষয় অবহিত করা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হতে হবে।

৭. বিশেষ শিক্ষাশিবির সমূহের লক্ষ্যমাত্রার আলোকে পূর্বাহ্নেই সিলেবাস তৈরি করে কমপক্ষে

২ মাস পূর্বে তা নির্ধারিত শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের কাছে পৌঁছাতে ও তাদের প্রস্তুতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. শিক্ষাশিবির ও শিক্ষা বৈঠকে পারতপক্ষে ওভারহেড প্রজেক্টর, কিপ চার্ট ইত্যাদি আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা দরকার।

৯. বিশেষ করে শিক্ষাশিবিরে আলোচনা, আলোচক, শিক্ষার্থী এবং সামগ্রিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উপর মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১০. প্রশিক্ষকগণ প্রশিক্ষণকালে শিক্ষার্থীদের সাথে সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করবেন

যাতে শিক্ষার্থীরা নিঃসঙ্কোচে মত প্রকাশ ও প্রশ্ন করতে পারে।

১১. আলোচনা/প্রশিক্ষণের বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে দ্বীনি বিষয়ের পাশাপাশি

প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন বাস্তব ও সমকালীন বিষয়সমূহ রাখা।

১২. বিগত প্রোগ্রামের ত্রুটি বিচ্যুতিকে সামনে রেখে পরবর্তী প্রোগ্রামের মানোন্নয়ন করা।

(ঙ) স্পীকারস ফোরাম

বক্তা তৈরির উদ্দেশ্যে গঠিত হয় স্পীকারস ফোরাম। কয়েকজন মিলে একটি ফোরাম করতে হয়। ফোরামের অধিবেশন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক হতে পারে। প্রয়োজনবোধে একই সপ্তাহে দু’তিন অধিবেশনেও হতে পারে। ফোরামের একজন সভাপতি থাকবেন। তিনি সদস্যদের মধ্য থেকেও হতে পারেন। তবে বক্তৃতায় অভিজ্ঞ হতে হবে। নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সদস্যরাও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বক্তৃতা করবেন। সভাপতি ভুল-ত্রুটি উল্লেখ করে দেবেন এবং পরামর্শ দেবেন। স্পীকারস ফোরামের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে বক্তৃতা শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান জন্মে।

(চ) লেখক শিবির

আমাদের সংগঠন যুব সমাজের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ সাধনে সদা তৎপর। এ কারণে সাহিত্যমোদী ছাত্রদের নিয়ে লেখকশিবির করা যেতে পারে। স্বরচিত কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প ইত্যাদির আসর জমানো এ শিবিরের কাজ। সমকালীন সাহিত্যের গতিধারা ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান ও এর কাজ। লেখক শিবিরের তরফ থেকে দেয়াল পত্রিকা, পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদি প্রকাশ করা যেতে পারে। তবে এর পূর্বে উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমোদন নিতে হবে।

(ছ) শববেদারী বা নৈশ এবাদত

আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা ও শক্তির উৎস। আর আল্লাহর সাহায্য বেশি বেশি পাওয়া যায় তার সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠার ভিতর দিয়ে। প্রতিটি কর্মে প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর ভয়ে হৃদয়মন কম্পিত থাকা প্রয়োজন। তাঁর স্মরণে অন্তর সদা জাগ্রত থাকা চাই। এজন্য বিশেষ বিশেষ ইবাদত অনুষ্ঠানের প্রয়োজন। রাতের নিবিড় পরিবেশে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, সবাই যখন বিশ্রাম ও আরামের কোলে নিবিষ্ট হয়ে থাকে, তখন আপনি উঠুন। আপনি আপনার হৃদয়-মন দিয়ে রাব্বুল আলামীনের অতি নিকটে, তার সান্নিধ্যে চলে যান। হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে বলে উঠুন- “আল্লাহুম্মা লাকা আস্লামতু ওয়া বেকা আমানতু, ওয়া আলাইকা তাওক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বেকা আসামতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু” হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম, তোমার উপর আস্থা স্থাপন করলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকে আমার মনকে সম্পূর্ণ নিবিষ্ট করলাম, তোমার জন্য সংগ্রাম, সাধনা, ও আমার আন্দোলন এবং তোমারই কাছে আমার ফরিয়াদ। শত জটিল বাঁধা অতিক্রম করে আমাদেরকে এ কন্টকাকীর্ণ পথ চলতে হয়। সে জন্যে খোদার সান্নিধ্যে আসা প্রয়োজন। আল্-কুরআনে মুমিনদের পরিচয় দিয়ে আল্লহ বলেছেন – “ওরা সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, বিনয়ী, আল্লাহর পথে খরচ করে এবং রাত্রির শেষভাগে মাগফেরাতের জন্য কাঁদে।” (আলে-ইমরান)

এদিকে লক্ষ্য রেখেই কর্মীদের মধ্যে খোদাভীতির সৃষ্টি এবং তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমাদের সংগঠনে শববেদারীর ব্যবস্থা রয়েছে। এতে নির্বাচিত কর্মীরা যোগদান করেন। যোগদানকারীর সংখ্যা খুব কম অথবা খুব বেশি হওয়া ঠিক নয়। শববেদারী কোন মসজিদে বা সুবিধাজনক স্থানে সারা রাত বা রাতের শেষ তিন-চার ঘণ্টার জন্য হবে। এতে এক ঘণ্টাব্যাপী দরসে কুরআন অথবা দরসে হাদীস, একটি আলোচনা, তাহাজ্জুদের নামায, দোয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।

এ প্রোগ্রাম সাধারণত : এশার নামাযের পর থেকে শুরু হয়। মাঝখানে একটু ঘুমিয়ে আবার শেষরাতে উঠতে হয়। শববেদারীতে আলোচনার বিভিন্ন বিষয়-খোদাভীতি, আল্লাহর আজাব নাজিলের বিধি, তওবা, দোয়া, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অগ্নিপরীক্ষা প্রভৃতি সম্পর্কিত হতে হয়। শববেদারীর সাফল্য নির্ভর করে পরিবেশ বজায় রাখার উপর। শববেদারীতে সাংগঠনিক বা অন্য কোন প্রোগ্রাম থাকা ঠিক নয়। এতে শববেদারীর পরিবেশ নষ্ট হয়।

শববেদারীতে নিম্নোক্ত কর্মসূচি থাকতে পারে।

কার্যসূচীঃ  

 উদ্বোধন ৫ মি.

 দারসে কুরআন/হাদীস ১ ঘণ্টা

 বিশ্রাম ২ ঘণ্টা

 ব্যক্তিগত নফল এবাদত ১ ঘন্টা

 শেষ রাত্রে ১টি আলোচনা ১ ঘণ্টা

 সমাপনী/মুনাজাত ১ ঘণ্টা

(জ) সামষ্টিক ভোজ

মাঝে মাঝে কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করার জন্য সামষ্টিক খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে প্রত্যেক কর্মী নিজের খাওয়া এক জায়গায় নিয়ে আসবে অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং সকলে মিলে একত্রে বসে খাবে। খাওয়ার আগে বা পরে বক্তৃতা বা আলোচনা চলবে। এ প্রোগ্রামে যথেষ্ট আনন্দ ও শিক্ষণীয় বিষয় আছে “বুনইয়ানুম মারছুছ” (সীসা ঢালা প্রাচীর) এর ন্যায় পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে।

(ঝ) ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ

সংগঠনের প্রত্যেক জনশক্তিকে বৈঠকে ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ করতে হয়। এ রিপোর্ট কর্মী তৈরির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যে কর্মীর রিপোর্ট যত উন্নত, সে তত উন্নত কর্মী। রিপোর্ট কর্মীদের যোগ্যতা বাড়ায়, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে। রিপোর্ট হচ্ছে আয়না যা জীবনের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো প্রত্যেকের সামনে তুলে ধরে। প্রত্যেক কর্মীকে ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হয় তবে পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুযায়ী সংরণের পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। মাঝে মাঝে পূর্বের রিপোর্টের সংগে বর্তমান রিপোর্ট তুলনা করে দেখতে হয়। এতে উন্নতি, অবনতি বা স্থবিরতা ধরা পড়ে। রিপোর্ট শুধু সংরক্ষণ করলে চলে না। নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী সভাপতিকে দেখাতে হয়। সভাপতি রিপোর্টের উপর মন্তব্য এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। তবে কর্মী সভায় সভাপতি ব্যক্তি বিশেষের উপর মন্তব্য না করে সাধারণ মন্তব্য পেশ করেন। ইসলামী আন্দোলনের আদর্শ কর্মী হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ ও দেখানো অতি প্রয়োজনীয়।

ব্যক্তিগত রিপোর্টের ব্যাখ্যা

নিম্নে ব্যক্তিগত রিপোর্টের বিষয়সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা হলো-

 কুরআন অধ্যয়নঃ

ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস হল আল-কুরআন। তাই দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী বিধান মেনে চলার জন্য পবিত্র কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন অপরিহার্য। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতক্ষ্যভাবে কুরআনের আলোকে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তোলার উদ্দেশ্যেই নিয়মিত কুরআন অধ্যয়নের প্রতি উৎসাহিত করা হয়। এর লক্ষ্য হলো আল-কুরআনের মূর্ত প্রতীকরূপে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার মাধ্যম খোদার মনোনীত ও অমনোনীত কাজ সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকা। সুতরাং কুরআন অধ্যয়ন দ্বারা খোদার পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় কাজের তালিকা প্রস্তুত করে নিয়ে তাঁর পছন্দনীয় কাজে আত্মনিয়োগ এবং অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করে চলতে হবে। প্রত্যহ সকালে ফজরের নামাযের পরের সময়টা কুরআন অধ্যয়নের সর্বোত্তম সময়। তাছাড়া নিয়মতান্ত্রিকতা ও ধারাবাহিকতার প্রতিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

হাদীস অধ্যয়নঃ

হাদীস ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস। কুরআনকে বুঝতে হলে হাদীস অধ্যয়ন অপরিহার্য। কারণ, কুরআনের ব্যাখ্যাই হচ্ছে হাদীস। তাই প্রত্যহ কুরআন অধ্যয়নের সাথে সাথে হাদীস অধ্যয়নের দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। হাদীস অধ্যয়নের সময় পঠিত হাদীসের সাথে নিজের জীবনকে দেখতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে হাদীসের আলোকে নিজের চরিত্রকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। প্রত্যহ কমপক্ষে দু’তিনটি করে হাদীস নির্দিষ্ট সময়ে অধ্যয়ন করার চেষ্টা করা উচিত।

ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নঃ

যে কোন আদর্শবাদী আন্দোলনের কর্মীদের স্বীয় আদর্শের জ্ঞান লাভ করা, আদর্শের প্রতি অটুট বিশ্বাস স্থাপন করা ও আদর্শ মাফিক চরিত্র গঠন করা একান্তই অপরিহার্য। ইসলামী আন্দোলনের যোগ্য কর্মী হবার জন্য ইসলামী আদর্শের পর্যাপ্ত জ্ঞানের সাথে সাথে সমকালীন বিশ্বের যাবতীয় মতাদর্শ সম্পর্কেও পূর্ণভাবে ওয়াকিফহাল হওয়া প্রয়োজন। ইসলাম ও অনৈসলামের মৌলিক পার্থক্য এবং ইসলামী আদর্শের শাশ্বতরূপ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ না করে এ আন্দোলনে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কেবল গদবাঁধা কতগুলো মুখস্থ বুলি শিখে নেয়া যথেষ্ট নয় বরং গভীর অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের মধ্যে চিন্তার মৌলিকত্ব সৃষ্টি করা অপরিহার্য। নিয়মতান্ত্রিকতা লক্ষ্য করে অধ্যয়ন করাই এর অন্যতম সহায়ক।

পাঠ্যপুস্তুক অধ্যয়ন ও ক্লাসে উপস্থিতিঃ

আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী ভালো ছাত্র এবং ভাল মুসলিমরূপে গড়ে ওঠাই আমাদের মৌলিক কাজ। ছাত্রত্বকে বাদ দিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং শিবির-কর্মীদের নিয়মিত কাসে যোগদান এবং পাঠ্যপুস্তুক অধ্যয়নে অধিক তৎপর হতে হবে এবং এটাকে আন্দোলনেরই একটা অপরিহার্য কাজ মনে করতে হবে। অন্যান্য কাজের ন্যায় পাঠ্যপুস্তুক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে শিবির নিয়মতান্ত্রিকতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। যারা নিজের দোষে বা অমনযোগিতার কারণে ক্লাসের পড়া লেখার প্রতি ক্ষতি সাধন করে তারা প্রকারান্তরে শিবিরেরই ক্ষতি করে। যারা ব্যক্তিগত পড়াশুনা,পাঠ্যপুস্তুক অধ্যয়ন ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে ভারসাম্য রক্ষা করে চলে তারাই শিবিরের দৃষ্টিতে আদর্শ কর্মী।

জামায়াতে নামায আদায়ঃ

আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শিত হয় নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের এটাই সর্বোত্তম উপায়। জামায়াতে নামায আদায়কেই ইকামাতে সালাত বলা হয়েছে। মুমিনের জীবনকে সুশৃংখলভাবে গড়ে তোলার এ এক উৎকৃষ্ট পন্থা। যার নামায যত উন্নত আল্লাহর কাছে সে ততই মর্যাদা সম্পন্ন। বস্তুতঃ নামায ধাপে ধাপে বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয় বলেই বলা হয়েছে- ‘আসসালাতু মেরাজুল মুমিনীন’ ক্রমান্বয়ে এই নামাযকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে একে রিপোর্টের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জামায়াতে নামায আদায়ের মাধ্যমে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিককে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তোলা এর মূল লক্ষ্য।

কর্মী যোগাযোগঃ

আন্তরিক পরিবেশে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একে অপরকে আন্দোলনের কাজে উৎসাহিত করা, একে অপরের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা, পারস্পরিক পরামর্শ ও সমালোচনার মাধ্যমে ব্যক্তি গঠন ও সংগঠনের সামগ্রিক উন্নতি বিধানে তৎপর হওয়াই এর প্রধান লক্ষ্য। বিশুদ্ধ নিয়ত এবং স্বচ্ছ আন্তরিকতা ছাড়া এটি ফলপ্রসু হতে পারে না। কর্মী যোগাযোগ পরিকল্পনাবিহীন অথবা উদ্দেশ্যহীন সাক্ষাতের নাম নয়।

প্রত্যেক শাখার প্রতিটি কর্মীকে একটা টার্গেট তৈরি করে কর্মী যোগাযোগ করতে হয়। অনগ্রসর কর্মীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাকে হেকমতের সাথে অগ্রসর করা এবং অগ্রসর কর্মীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেকে তার মানে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চালানোই কর্মী যোগাযোগের মুখ্য উদ্দেশ্য। এ অনুভূতি নিয়ে যেখানে কর্মী যোগাযোগ হয় না সেখানে কর্মীদের মধ্যে চিন্তার ঐক্য স্থাপিত হতে পারে না,পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হতে পারে না এবং সংগঠন কখনো হতে পারে না গতিশীল। এক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কর্মী যোগাযোগ কোন কর্মীর দোষ অনুসন্ধানের জন্য নয়-তার সংশোধনের জন্যই করা হয়। এজন্য যার সাথে আপনি যোগাযোগ করবেন তার ছিদ্রান্বেষণ না করে তার গুণগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিন এবং তার মধ্যে যে সকল দোষত্রুটি রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্য তার সামনে আপনার নিজের চরিত্র, কর্মজীবন, আচার-আচরণ ইত্যাদিকে বাস্তব আদর্শ হিসেবে তুলে ধরুন।

বন্ধু,সমর্থক যোগাযোগ ও বই বিতরণঃ

আমাদেরকে কুরআনে বর্ণিত হেকমত অনুযায়ী দাওয়াতী কাজ আঞ্জাম দিতে হবে এবং এ উদ্দেশ্যেই বন্ধু ও সমর্থক যোগাযোগ করতে হয়। কারো সাথে শিবির সম্পর্কে দু’চার মিনিট আলাপ করলেই দাওয়াত পৌঁছানো হয় না। বরং কমপক্ষে তিন/চার জন বন্ধু ঠিক করে প্রতি সপ্তাহে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা দরকার, যাতে করে একজন বন্ধু সমর্থকে উন্নিত হতে পারে। এখানেও বিশুদ্ধ নিয়ত এবং অকৃত্রিম আন্তরিকতা আবশ্যক। মনে রাখবেন কৃত্রিমতা, অভিনয়সূচক আচরণ বা সাময়িক লোভ-লালসার মাধ্যমে কাউকে কোনদিন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী করা যায় না। পক্ষান্তরে নিজে ইসলামী চরিত্র সৃষ্টির কাজে আত্মনিয়োগ করে নিছক আল্লাহর জন্য মানুষকে এ পথে আহ্বান জানালে তা ফলপ্রয়সূ না হয়ে পারে না।

ছাত্রদের মগজে পুঞ্জিভূত আবর্জনা পরিষ্কার করে তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্যে পাত্র বুঝে পুস্তুক পরিবেশন দাওয়াতী কাজের উত্তম হাতিয়ার। প্রকৃতপে ইসলামী আন্দোলন বুঝার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হচ্ছে অজ্ঞতা। টার্গেটকৃত বন্ধু ও সমর্থকদেরকে বই বিতরণ ও পড়ানো ছাড়া দাওয়াতী কাজ ফলপ্রসূ হতে পারে না। কোন ব্যক্তিকে বই দেয়ার আগে তার মনে পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি;পড়বার পর ঠিকমত বুঝলো কি না সে খবর নেয়া এবং সুযোগ মত আন্দোলনের দিকে টেনে আনাই আমাদের কাজ।

সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনঃ

উপরে বর্ণিত কাজগুলো ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে নিজের এবং অন্যের জীবন গঠনের জন্যে অবশ্যই করতে হয়। সাথে সাথে প্রত্যেক কর্মীকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং তার জন্যে নিয়মিত কিছু সময় ব্যয় করতে হয়। প্রত্যেক জেলা, শাখা ও উপশাখা সভাপতির সাংগঠনিক দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সভাসমূহ পরিচালনা, পরিকল্পনা তৈরি, কর্ম বন্টন ও কর্মী পরিচালনা, বিভিন্ন বিভাগের কাজের তদারকী, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কর্মীদের এগিয়ে আনা,কর্মীদের ব্যক্তিগত রিপোর্ট দেখা এবং উর্ধ্বতন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।

উল্লেখ্য বন্ধু,সমর্থক,মেধাবী ছাত্র ও শুভাকাংখী যোগাযোগ দাওয়াতী কাজের অংশ। এছাড়াও প্রত্যেক কর্মীর দাওয়াতী কাজ, কর্মী যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক অনুষ্ঠানে যোগদান এবং সংগঠন কর্তৃক দৈনন্দিন যেসব দায়িত্ব অর্পিত হয় সেগুলোও সাংগঠনিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

পত্র-পত্রিকা পাঠঃ

চলমান বিশ্বের খবরাখবর রাখার জন্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সাময়িকীর সাথে সম্পর্ক রাখা অপরিহার্য। একজন ছাত্র হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে সর্বোপরি একটি প্রাণবন্ত আন্দোলনের কর্মী হিসেবে পত্র-পত্রিকার সাথে ওয়াকিফহাল হওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং এ সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার মত যোগ্যতা অর্জনও অত্যাবশ্যক।

শরীর চর্চাঃ

সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন ছাড়া একজন মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে পারেনা। এজন্য নিয়মিত শরীর চর্চা আবশ্যক।

আত্ম-সমালোচনা

আত্মসমালোচনা বলতে নিজ নিজ কাজের সামগ্রিক খতিয়ান নেয়াকেই বুঝায়। বস্তুতঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত নিজস্ব কাজের খতিয়ান নিলে তার জীবন ক্রমাগত উন্নত না হয়ে পারে না। বিশেষ করে যারা খোদাকে হাজির নাজির জেনে নিজ নিজ কাজের পর্যালোচনা করে তারা দ্বীনি দায়িত্ব পালনে কোন অবস্থাতেই শৈথিল্য দেখাতে পারে না। আখেরাতের সাফল্য যাদের একমাত্র কাম্য,খোদার সন্তষ্টির আশা এবং অসন্তোষের ভীতির মাঝ পথে যারা দন্ডায়মান, তাদের জীবনে আত্ম-সমালোচনার জন্যে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নেয়া ভালো। আত্ম-সমালোচনার সময় নিজের মনে এ অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে যেন রোজ কেয়ামতে পরম পরাক্রমশালী হাকিমের সামনে নিজের আমলের পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

(ঞ) দোয়া ও নফল ইবাদত

বাতিলের সয়লাবে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে মান রক্ষা করা দুরূহ কাজ। মান ঠিক রাখার জন্যে কর্মীদের অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ফরয,ওয়াজিবসমূহ আদায় করে দু’একটা ভালো কাজ সম্পন্ন করা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আল্লাহর পছন্দনীয় কাজে সব সময় জড়িত থেকেই এটা করা যেতে পারে। অর্থাৎ এজন্যে প্রয়োজন নফল ইবাদতের। নফল ইবাদতের ভেতর সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে নফল নামায। নফল নামাযের ভেতর তাহাজ্জুদের গুরুত্ব সর্বাধিক। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগতভাবে রাতে জেগে কর্মীরা তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতে পারেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্যে তাহাজ্জুদ নামাযের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের নেতা রসূলে মকবুল (সাঃ) নামাযের গুরুত্ব বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য ওয়াক্তের নামাযের সময়ে যে নফল নামায প্রচলিত রয়েছে সেদিকেও কর্মীদের মনোযোগ দেয়া উচিত। এরপরেই রয়েছে নফল রোযার গুরুত্ব। আমরা যুবক। এ বয়সে চুপ করে বসে থাকা যায় না। ভালো কাজ না পেলে খারাপ কাজে আত্মনিয়োগ করাটাই স্বাভাবিক। এ বয়সে দৈহিক চাহিদাও বেশি। এগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য। নফল রোযা কর্মীদেরকে এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এ কারণে রসূলুল্লাহ (সাঃ) যুবকদেরকে প্রতিমাসে দু’টি করে রোযা রাখার উপদেশ দিয়েছেন। রোযা একদিকে যেমন দৈহিক চাহিদা নিয়ন্ত্রিত ও স্তিমিত করে অপরদিকে তেমনি আত্মাকেও পবিত্র করে তোলে। আল্লাহর নেয়ামতের শোকর করা, প্রতিটি কাজের শুরুত্ব শেষে নির্ধারিত দোয়া করা, সফরে, বিশ্রামে, পারস্পরিক দেখা সাক্ষাতে ওজুতে, জায়নামাজে, সুখে-দুঃখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে সমস্ত দোয়া পড়তে বলেছেন, সেগুলি অভ্যাস করার প্রচেষ্টা চালানো উচিত। দোয়া অস্তিতা ও দুশ্চিন্তা দূর করে,হৃদয়ে এনে দেয় প্রশান্তি।

(ট) এহতেছাব বা গঠনমূলক সমালোচনা

ইসলামী আন্দোলনের এক কর্মী অপর কর্মীর আয়না স্বরূপ। তাই প্রত্যেক কর্মীকে অপর কর্মীর ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধন এবং দুর্বলতা থেকে হেফাজত করার চেষ্টা করতে হবে। ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করার উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে এবং তার দুর্বলতাগুলোকে জানিয়ে দিতে হবে। কারো দোষ দেখানো বড় কঠিন কাজ। এজন্যে সময়, মেজাজ, মনোভাব ইত্যাদি বিবেচনা করে নেহায়েত একজন শুভাকাংঙ্খী হিসেব তার দোষ-ত্রুটি তাকে জানাতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে প্রচেষ্টা চালানোর পর সংশোধন না হলে কর্মী, সাথী বা সদস্য বৈঠকে এহতেছাবের সময় তা তুলে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে সমালোচনা গঠনমূলক হতে হবে। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা অথবা কারো ত্রুটি শুধু শুধু তালাশ করা শুভ লক্ষণ নয়। যার দোষ তুলে ধরা হবে তার কর্তব্য হচ্ছে ত্রুটির স্বীকৃতি দেয়া, সংশোধনের জন্যে দোয়া কামনা করা এবং প্রচেষ্টা চালানো। কোন কর্মীর ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও কারো মনে ভুল ধারণা থাকতে পারে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্মী যখন কারণ দর্শাবেন বা বুঝিয়ে দেবেন তখন তা ঐকান্তিকতার সাথে মেনে নেয়া ও ভুল ধারণা অন্তর থেকে মুছে ফেলা কর্তব্য। আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ভালোবাসার সম্পর্ক। ভালোবাসার বা ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠা সম্পর্কে ‘ভীতি’ প্রশ্রয় পেতে পারে না। এহতেছাব যখন স্থিমিত হয়ে যাবে, তখন গোটা আন্দোলন তার গতিশীলতা হারিয়ে ফেলবে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা কৃত্রিমতা আসবে। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাবে। অতএব মেজাজ ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী এটা চালু রাখা অত্যন্ত জরুরী।

(ঠ) আত্মসমালোচনা

একজন কর্মীর জীবনকে গতিশীল রাখার জন্য আত্ম সমালোচনা বা আত্ম বিশ্লেষণ অপরিহার্য। এর চর্চা হতে থাকলে মনে অহংকার সৃষ্টি হতে পারে না। কোন কাজ করার পর প্রদর্শনেচ্ছা জন্মাতে পারে না। জীবন থেকে ত্রুটি বিচ্যুতি ক্রমান্বয়ে দূর হতে থাকে। তাই হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) যথার্থই বলেছেন “আল্লাহর কাছে হিসেব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও।” আত্ম-সমালোচনার সময় ভুলের জন্যে তওবা করতে হয়্ তওবা ব্যতিরেকে আত্ম-সমালোচনার ফল পাওয়া যায় না। আত্ম-সমালোচনার যেরূপ নির্দিষ্ট সময় রয়েছে তদ্রুপ তওবার জন্যেও নিয়ম রয়েছে। তাই প্রথমে তওবার নিয়মাবলী উল্লেখ করা হচ্ছে।

তওবার নিয়ম

 সর্বপ্রথম ঐকান্তিকতার সাথে নিজ ভুলের স্বীকৃতি দেয়া। এটা সহজ কাজ নয়।

 মানুষ বড় একটা পাপ করেও তা “জাষ্টিফাই” করতে চায়।

 ভুলের জন্যে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।

 দ্বিতীয়বার ভুল না করার জন্যে ওয়াদা করা এবং ওয়াদাকে কার্যকরী করার বাস্তব চিন্তা করা।

 নামায,রোযা বা আর্থিক কুরবাণীর বিনিময়ে ভুলের কাফ্ফারা আদায় করা।এখানে উল্লেখযোগ্য যে,একবার তওবা করার পর তা ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা আদায় করা ওয়াজেব। আর উপরে যে কাফ্ফারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা তওবার পূর্ণতার জন্যে।

আত্ম সমালোচনার পদ্ধতিঃ

সময় নির্বাচন : আত্ম-সমালোচনা করার ভালো সময় হচ্ছে শোয়ার পূর্বমুহুর্ত। এর চেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ফজর নামাজের পর। সবচেয়ে ভালো সময় এশার নামাজের পর।

প্রথম পর্যায়ে আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে জায়নামাজে বসুন। মনে এ চিন্তার উদ্রেক করুন যে আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। আপনি সেই রাব্বুল আলামীনের সামনে বসে আছেন; যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর হাতেই আপনার জীবন ও মৃত্যু। তিনি রহমান, রহীম ও কাহ্হার। আপনার অন্তরের নিভৃত কোণের খবরও তিনি রাখেন। মস্তিষ্ক দিয়ে আপনি কি চিন্তা করেছেন তা তিনি ভালোভাবে জানেন। তিনি ইনসাফগার। আপনার উপর তিনি কখনও জুলুম করেন না।

দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনি আপনার সারাদিনের কর্মব্যস্ততা স্মরণ করুন। আপনি যে সমস্ত ভালো কাজ করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন এবং যে ভুল করেছেন তার জন্যে তওবা করুন।

তৃতীয় পর্যায়ে আজকে আপনি যে সব ফরজ ওয়াজেব আদায় করেছেন তা চিন্তা করুন। এসব আদায়ের কালে আপনার আন্তরিকতা এবং মনোযোগ যথার্থ ছিলো কিনা ভেবে দেখুন।

চতুর্থ পর্যায়ে আপনি আপনার আজকের সাংগঠনিক কাজ নিয়ে চিন্তা করুন। যে দায়িত্ব আপনার উপর ছিল তা কি পালন করেছেন? এজন্য আপনার সময় ও সামর্থ্য যা ছিল আপনি কি তা পুরাপুরি ব্যয় করেছেন?

পঞ্চম পর্যায়ে আপনি আপনার আজকের ব্যবহারিক জীবন (মুয়ামেলাত) সম্পর্কে চিন্তা করুন।

শেষ পর্যায়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। ইনশাআল্লাহ এভাবে আত্ম-সমালোচনা করলে কর্মীদের মান বৃদ্ধি পাবে এবং জীবন তাদের পুত-পবিত্র হয়ে উঠবে।

চতুর্থ দফা কর্মসূচিঃ ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র সমস্যা সমাধানঃ

“আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের দাবিতে সংগ্রাম এবং ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান।”

এ দফার দু’টি দিক রয়েছেঃ

(ক) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং (খ) ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান। নিম্নে এ দুটি কাজের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা হল:

(ক) ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম

আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। তাই এ সমাজে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ রাতারাতি হওয়া সম্ভব নয়। এ কাজ ক্রমিকপর্যায়ে হতে হবে। এ আন্দোলন ধারাবাহিকতার সাথে কিভাবে ক্রমান্বয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে হবে তা নিম্নে বর্ণিত হলো:

আমাদের কর্মীদের প্রথমত : জেনে নিতে হবে,(ক) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কি বুঝায়। (খ) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কি কি (গ) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে প্রবর্তন করা যায় (ঘ) বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দোষ-ত্রুটি কি কি (ঙ) এর সুদূরপ্রসারী ফল কি (চ) বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক গলদ কোথায় ইত্যাদি। এজন্যে আমাদের প্রকাশিত ও অন্যান্য ইসলামী চিন্তাবিদদের বইগুলো পাঠ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত : আমাদেরকে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমত সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ ছাত্র সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক চিন্তাশীল নাগরিকদেরকে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কুফল অবগত করিয়ে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে। এ জন্যে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আলোচনা, পুস্তুক সাময়িকী, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি বিতরণ করতে হবে। এছাড়া গ্রুপ মিটিং, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন অবস্থা বুঝে করা যেতে পারে।

তৃতীয় : অনুকূল পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় দু’মাসে বা প্রতিমাসে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে পোস্টারিং, পত্রিকায় বিবৃতি, পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে লেখা, অনলাইন ক্যাম্পিং, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে দিবস ও সপ্তাহ পালন প্রভৃতি কাজ করা যেতে পারে। বিভিন্ন সভা সমিতিতে প্রস্তাব পাশ করিয়ে পত্রিকায় দিতে হবে। প্রতক্ষ্যভাবে সম্ভব না হলে পরোক্ষভাবেও কাজ করা যেতে পারে।

চতুর্থ পর্যায়ে : আমাদের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের নিকট আবেদন করতে হবে ইসলামী করণের পরিকল্পনা পেশ করার জন্য। ইসলামী মনোভাবাপন্ন শিক্ষাবিদদেরও আহবান করতে হবে,প্রবন্ধ,নিবন্ধ,বই ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার রূপ ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের সামনে তুলে ধরার জন্য।

পঞ্চম পর্যায়ে : আমাদের কর্মীদের লিখিত প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা সহকারে শিক্ষাব্যবস্থার উপর বিশেষ সংকলন বের করার চেষ্টা করতে হবে। সংকলন বের করার পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই এ কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনই আমাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্যে পৌঁছার হাতিয়ার মাত্র। আমাদের চিরস্থায়ী উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।

(খ) ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান

 অর্থাৎ ছাত্রদের যুক্তিসংগত দাবি-দাওয়া পূরণের জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করা ও তাদের অভাব-অভিযোগ দূরীকরণে এগিয়ে আসা। এক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।

ছাত্র বলেই ছাত্র সমস্যার ব্যাপারে আমরা অমনোযোগী থাকতে পারি না। ছাত্রদের যাবতীয় ন্যায়সংগত সমস্যা সমাধানে আমাদের অগ্রণী হতে হবে। সমস্যা সমাধানের আমাদের মনে রাখতে হবে যে,আমরা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। এক সমস্যার সমাধান করতে যেয়ে আরও দশটি সমস্যার সৃষ্টি করা আমাদের কাজ নয়। আমরা নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে গঠনমূলক প্রচেষ্টার পরিবর্তে ধ্বংসাত্মক কোন পন্থা অবলম্বনে বিশ্বাসী নই।

আমরা ছাত্র সমস্যাকে দু’ভাবে ভাগ করতে পারি- (১) ব্যক্তিগত (২) সমষ্টিগত।

(১) ব্যক্তিগত সমস্যা:

ব্যক্তিগত সমস্যার যেগুলো বেশিরভাগ অর্থনৈতিক, সেগুলো সমাধানের জন্যে স্বাবলম্বন পন্থা অনুসরণ করি। অর্থাৎ নিজেরাই এসব সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করি। ছাত্রদের লজিং না থাকা, বেতন দানে ও পরীক্ষার ফি দিতে অক্ষমতা, বই কেনার অসামর্থ্য ইত্যাদি দুরীকরণার্থে আমরা আমাদের ছাত্র কল্যাণ বিভাগের মাধ্যমে সামর্থ অনুযায়ী নিম্নোক্ত কাজ করে থাকি:

 লজিং যোগাড় করে দেয়া।

 স্টাইপেন্ড চালু করা।

 লেন্ডিং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা।

 ফ্রি-কোচিং ক্লাস চালু করা।

 ভর্তি সহায়িকা প্রকাশ।

 বিনা মূল্যে বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিলি।

লেন্ডিং লাইব্রেরীঃ গরীব ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ করার জন্যেই লেন্ডিং লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমাদের কর্মীদের ভেতর যারা বিভিন্ন ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করেন, তারা তাদের পাঠ্য বই শিবিরের লেন্ডিং লাইব্রেরীতে দান করতে পারেন। শুভাকাংখীদের দানও আমরা সানন্দে গ্রহণ করে থাকি। এতে অনেক ছাত্রের শিক্ষা লাভের পথ সুগম হয়।

লেন্ডিং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি

পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কর্মীদেরকে পরীক্ষার্থীদের সাথে যোগযোগ করে তাদেরকে আমাদের লেন্ডিং লাইব্রেরীতে বিনামূল্যে বই প্রদান করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্যে পূর্বাহ্নে একটা বিজ্ঞাপনও পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেয়া যেতে পারে।

এভাবে কর্মীদের দেয়া বই ও ছাত্রদের থেকে সংগ্রহ করা বই দিয়ে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বই গরীব ও উপযুক্ত ছাত্রদেরকে দিতে হয়। এক মাসের জন্যে বই ইস্যু করা হয় এজন্যে কার্ড তৈরি করে নিতে হয়। বইয়ের তালিকা ও বিতরণ রেজিষ্ট্রার রাখতে হয়। লেন্ডিং লাইব্রেরীর জন্যে প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি থাকে। এজন্য পরিচালকের তত্ত্বাবধানে এ লাইব্রেরী পরিচালিত হয়।এ লাইব্রেরীর জন্য বিভিন্ন পুস্তুক বিক্রেতা ও প্রকাশকের নিকট থেকেও বই নেয়া যেতে পারে। এজন্যে বিশেষ অভিযান চালানো প্রয়োজন।

ফ্রি কোচিং ক্লাসঃ

পরীক্ষার কয়েক মাস পূর্বে বিনা পারিশ্রমিকে কোচিং ক্লাস করার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। সে জন্যে উপযুক্ত ব্যবস্থাদির মাধ্যমে ছাত্রদেরকে কোচিং ক্লাসের খবর জানিয়ে দিতে হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা সুবিধাজনক স্থানে সকালের দিকে অথবা রাত্রে এ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে ক্লাস করার অনুমতি নিতে হবে।

আমাদের মনোভাবাপন্ন শিক্ষক অথবা মেধাবী কর্মীরা এতে শিক্ষতা করবেন। ছাত্রদের জন্যে অংক, ইংরেজী অথবা জটিল কোন বিষয়ের কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হয়।

ভর্তি সহায়িকা প্রকাশঃ

 বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি উপযোগী সহায়িকা প্রকাশ করা যেতে পারে।

বিনামূল্যে প্রশ্নপত্র বিলি: বিগত বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যোগাড় করে ফটোকপি করে অথবা ছেপে ছাত্রদের নিকট অতি কম মূল্যে অথবা বিনামৃল্যে বিতরণ করা যেতে পারে। কলা,বাণিজ্য ও বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিভাগের প্রশ্ন পত্র পৃথক পৃথক পুস্তিকায় ছাপিয়ে বিক্রি করা যায়। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে বিক্রয় করা সহজ। কারণ, এসব শ্রেণীতে ছাত্র বেশি থাকে।

স্টাইপেন্ড : যাকাতের টাকা সংগ্রহ ও বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ধনী ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে গরীব ছাত্রদের জন্য বৃত্তি বা স্টাইপেন্ডের বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। অনেকে আছেন যারা সংগঠনের বায়তুলমালে টাকা দিতে রাজী নন।কিন্তু গরীব ছাত্রদের জন্যে টাকা দিতে আগ্রহী, তাদের সাহায্য এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কর্জে হাসানা : নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কাউকে বিপদে আর্থিক সাহায্য দেয়ার জন্যে কর্জে হাসানা চালু করা যেতে পারে। এখান থেকে কাউকে কর্জে দিতে হলে লিখিত চুক্তি হয়ে যাওয়া উচিত।

(২) সমষ্টিগত সমস্যা:

উপরে ছাত্রদের ব্যক্তিগত সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ছাত্রদের অনেক সমস্যা রয়েছে যা সমষ্টিগত। যেমন ভর্তি ও আসন সমস্যা, শিক্ষকের অভাব, পাঠাগারের অভাব, মসজিদ না থাকা, কেন্টিনের সমস্যা, নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা, পাঠ্য বই এর মূল্য ও বেতন বৃদ্ধি প্রভৃতি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে আন্দোলন প্রয়োজন। আন্দোলনের নামে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়াও আমাদের উদ্দেশ্য নয় এজন্যে এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের কর্মসূচি নিম্নরূপ:

(ক) আমরা প্রথমে সমস্যার কারণ নির্ণয় করতে চেষ্টা করব। গোড়ায় গলদ থাকলে শাখা-প্রশাখা নিয়ে হৈ-চৈ করে লাভ নেই। কারণ নির্ণয়ের পর যথাসম্ভব মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট ডেলিগেট প্রেরণ, স্মারকলিপি প্রদান, পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, স্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে কর্তৃপক্ষকে সমস্যা সমাধানের যৌক্তিকতা ও পন্থা বুঝাতে চেষ্টা করব। আমাদের বিশ্বাস, বেশির ভাগ সমস্যাই এভাবে সমাধান করা যায়।

 (খ) যদি উপরোক্ত উপায়ে সমস্যা সমাধানের কোন ব্যবস্থা না হয় তাহলে প্রতিবাদ সভা,নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ, পোষ্টারিং, পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান প্রভৃতি উপায়ে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা করব।

(গ) উপরোক্ত দু’উপায়ের পরেও যদি কর্তৃপক্ষ অনমনীয় থাকেন, তখন আমরা প্রতীকি ধর্মঘট পালন ও সুশৃংখল আন্দোলনের মাধ্যমে এসব দাবি আদায়ের চেষ্টা করব।

আমরা নিশ্চিত যে, উপরোক্ত তিনটি পর্যায়ে চেষ্টা করলে কোন সমস্যা সমাধান ছাড়া থাকতে পারে না। যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে কর্তৃপক্ষ গঠনমূলক আলোচনা চান না অথবা সমষ্টির স্বার্থে ব্যক্তি বা কতিপয় লোকের স্বার্থ ত্যাগ করতে নারাজ। এহেন মুহূর্তে অবস্থার দাবি অনুযায়ী আমাদেরকে আরো বলিষ্ঠ পদপেক্ষ গ্রহণ করতে হবে।

সংসদ নির্বাচনঃ

অসৎ নেতৃত্বের অপসারণ ও সৎ নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা ছাড়া দুনিয়াতে ইসলামী সমাজ বিনির্মান সম্ভব নয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চত্বরেও আমাদেরকে অনৈসলামিক নেতৃত্ব অপসারণের জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। আমাদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, নির্বাচনে কোন ভূমিকা না থাকা মানেই সংগঠনের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ জাগানো।

দ্বিতীয়ত : নেতৃত্বের ব্যাপারে আমাদের কোন বক্তব্য না থাকার অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোন প্রভাব না থাকা। সন্নাসী বা বৈরাগীর মত সাধারণতঃ আমরা ভোটদান থেকে বিরত থাকতে পারি না। আমাদেরকে ভোট দিতে হবে। কিন্ত কাকে ভোট দেব। যেহেতু আমরাও আন্দোলন করছি-তাই আমাদেরকে হয় নিজেরদের কর্মী প্রার্থী করাতে হবে নতুবা অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যক্তিকে সমর্থন করতে হবে।

সংসদ নির্বাচনে আমাদের নীতিঃ

 (ক) আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মূল কাজের পরিমাণ যাচাই করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। অর্থাৎ কর্মী সংখ্যা, সমর্থক সংখ্যা, বায়তুলমালের আয়, বই বিতরণের মাসিক পরিমাণ ও পাঠক সংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনা করে আমাদেরকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

(খ) শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমাদের কাজ নয়। নির্বাচনের আগেও আমাদেরকে মৌলিক বা বুনিয়াদী কাজ করতে হবে।

(গ) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে।

(ঘ) সভাপতি বা দায়িত্বশীল কর্মীগণ কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি ছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। মনে রাখতে হবে মূল কাজের ক্ষতি সাধন করে নির্বাচনে অযথা জড়িয়ে পড়ার পরিণতি মারাত্মক।

পঞ্চম দফা কর্মসূচিঃ  ইসলামী সমাজ বিনির্মান

“অর্থনৈতিক শোষণ,রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং সাংস্কৃতিক গোলামী হতে মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী সমাজ বিনির্মানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।”

এখানে অবশ্য মনে রাখতে হবে আমরা ছাত্র। ছাত্র সমাজ নিয়েই আমাদের আন্দোলন। তাই ছাত্রত্বকে বিসর্জন দিয়ে আমরা কোন তৎপরতা চালাতে প্রস্তুত নই। একটি দায়িত্বশীল ছাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমসাময়িক রাজনৈতিক তৎপরতার সাথে আমাদের তৎপরতাকে একাকার করে দিতে পারি না। তাই বলে জাতীয় সংকটের মুহূর্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে আমরা বিরতও থাকতে পারি না। এর অর্থ এই নয় যে সাধারণ অবস্থায় আমরা জাতীয় সমস্যা থেকে দূরে থাকি। আত্মসচেতনতার সাথে আমরা জাতীয় সমস্যা অবলোকন করি এবং তা দূর করতে বলিষ্ঠ ও গণমূখি ভূমিকা পালন করি। সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইসলামী পরিবেশ তৈরি করার জন্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। এ ব্যাপারে সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমিটি কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে বাস্তব এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। দু’ভাবে আমরা এ দফার কাজ করে থাকি।

প্রথমত:

ইসলামী সমাজ বিনির্মান মুখের কথায় বা স্লোগানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মীবাহিনী গঠন

(ক) ক্যারিয়ার গঠন:

আমাদের প্রত্যেককে Career গঠনের ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্থ করা যাবে না। আসলে আমাদের সংগঠনে যে সমস্ত কাজ রয়েছে তা সম্পন্ন করতে গিয়ে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ করার প্রয়োজন হয় না। শুধু প্রয়োজন বাস্তব অনুভূতি,ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অক্লান্ত পরিশ্রম। এক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম হলে তা বিশেষ পরিস্থিতিতেই হয়। বস্তুতঃ ক্যারিয়ারকে অক্ষুন্ন রেখে যে সংগঠনের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম সেই ভালো কর্মী। এ ধরণের কর্মীই আমাদের কাম্য।

(খ) নেতৃত্ব তৈরি :

সঠিক নেতৃত্বের অভাবেই জাতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। ইসলামী সমাজ বিনির্মান সাধন তো দূরের কথা জাতির সাধারণ কোন কাজও সঠিক নেতৃত্ব ব্যতিরেকে সুসম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এজন্যে নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন কর্মীদেরকে সংগঠনের যাবতীয় তৎপরতা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয়-ক্ষেত্র যেমন-প্রশাসন,প্রকৌশল,শিক্ষা,কৃষি, শিল্প,পার্লামেন্ট ইত্যাদির প্রতিটি ক্ষেত্রে যথার্থ পরিচালক প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবমূখী পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনাদেরকে এ প্রয়োজন পূরণ করতে হবে। তাই কর্মী নিজে অথবা সংগঠনের পরামর্শে যে কোন একটি বিভাগকে টার্গেট করে নেবে। তারপর উক্ত বিভাগের একজন এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে উঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। মোটকথা, আমরা সত্যিকার মুসলিম চিকিৎসক,মুসলিম প্রশাসক ইত্যাদি তৈরি করতে চাই।

(গ) কর্মী গঠন:

ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা ও ইসলামী সমাজ বিনির্মান সাধনের জন্য একদল সুশৃংখল কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন। এ সংগঠন তার যাবতীয় তৎপরতার মাধ্যমে উপরোক্ত প্রয়োজন পূরণ করতে চায়। অতএব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম যথার্থভাবে মেনে চলাই এক্ষেত্রে আমাদের কাজ।

(ঘ) জ্ঞান অর্জন:

রাজনীতি, অর্থনীতি, শাসনতন্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার পরিবর্তে এতদসংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাকেই আমরা প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নিম্নোক্ত দিকগুলোকে সামনে রেখে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

সর্বপ্রথম চরিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান আমাদের থাকতে হবে। জাতীয় চরিত্রের বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থার অন্তর্নিহিত কারণ আমাদের উদ্ঘাটন করতে হবে এবং সমাধানের সঠিক পথ জানতে হবে।

দেশের রাজনৈতিকি পরিস্থিতি সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় ধারণা রাখতে হবে। ইতিহাস,ঘটনাপ্রবাহ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বর্তমান রাজনৈতিক গতিধারার উৎস খুঁজে বের করতে হবে,রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে সমস্ত দল সক্রিয় রয়েছে তাদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য জানতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ সংক্রান্ত প্রয়াজনীয় মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাদের কোনটা কল্যাণকর এবং কোনটা ক্ষতিকর তা বুঝতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যার সঠিক সমাধান কি,এ সমাধান কোন পথে আসতে পারে তার প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে অর্থনৈতিক সমস্যার গতিধারার ও রূপরেখা জানাও আমাদের প্রয়োজন। বর্তমানে যে ধরনের অর্থনীতি চালু আছে তার মূল ব্যবস্থাদি সংক্রান্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সঠিক পথ ও পন্থা ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা চাই।

সাংস্কৃতিক গোলামীর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের বাস্তবমূখী জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কি কি ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালু আছে তার উৎস, রূপ ও ব্যাপকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। কোথায় কোন পদ্ধতিতে কোন নীতিমালার উপর ভিত্তি করে আঘাত হানলে সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে আমরা মুক্তি পাবো তা যথার্থ জ্ঞানের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে হবে।

মোট কথা,বাতাসের উপর ভিত্তি করে আমরা চলতে চাই না। ইসলামী সমাজ বিনির্মান নামে মরিচিকার পিছনে ছুটতে আমরা নারাজ। আমাদের আবেদন, আমাদের যাবতীয় তৎপরতা হবে যুক্তিনির্ভর ও বুদ্ধিভিত্তিক। ইসলামী মূলবোধের ভিত্তিতে চারিত্রিক প্রতিফলনই হবে আমাদের কাজের মূল হাতিয়ার।

দ্বিতীয়ত :

বাস্তব  পদক্ষেপ গ্রহণ ও এক্ষেত্রে দু’ধরনের কাজ আমাদেরকে করতে হবে।

(ক) সহযোগিতা:

ইসলামী আন্দোলনের যে কোন বৃহত্তর প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। তবে তা আমরা করে থাকি সংগঠনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।

(খ) পরিবেশ সৃষ্টি ও চাপ:

চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে জাতীয় জীবনে একটা পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টির তৎপরতা চালাতে হবে। এ তৎপরতা যখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাত্রদেরকে সংশ্লিষ্ট করতে পারবে তখন সমাজ ও জাতীয় জীবনে তা একটি শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করবে। আর এহেন চারিত্রিক শক্তি দিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বদ্ধপরিকর।

এছাড়াও আমরা আমাদের ৫ম দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যে সময় সুযোগ ও সামর্থ অনুযায়ী জনগণের অংগনে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়ে জনমত সংগ্রহ করতে চাই। সভা, মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাটি প্রয়োজনরে পরিপ্রেক্ষিতে এবং গঠনমূলক পন্থায় করে থাকি।

উপরোক্ত কাজগুলোই হলো আমাদের সংগঠনের পাঁচ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঠিক পন্থা। যিনি আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করতে চান তাঁকে এ কাজগুলো ক্রমান্বয়ে আঞ্জাম দিতে হবে।

পরিশিষ্ট

আলোচনার বিষয়

এখানে সভাসমূহে আলোচনার জন্যে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো। এছাড়া প্রয়োজন ও সময়োপযোগী বিষয় নিজেরা নির্ধারণ করে নিতে হবে।

 * ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান।

 * কালেমায়ে তাইয়্যেবার তাৎপর্য।

 * ইবাদতের সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য।

 * ইসলামের মৌলিক পাঁচটি প্রত্যয় ও তার তাৎপর্য।

 * ঈমানের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি।

 * তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত।

 * রেসালাত ও তার তাৎপর্য।

 * পরকাল, যুক্তি ও বাস্তবতার দাবি।

 * আল-কুরআন কি ও কেন?

 * মুসলমান কাকে বলে বা সত্যিকার মুসলমান।

 * মানবতার মুক্তির দিশারী ইসলাম।

 * ইসলাম মানবতার একমাত্র মুক্তিপথ।

 * ইসলামই মানবতার একমাত্র ভবিষ্যৎ।

 * ইসলাম একটি আন্তর্জাতিক মতবাদ।

 * ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।

 * ইসলামী জ্ঞান অর্জন ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা।

 * একজন মুসলিম যুবকের কাছে ইসলামের দাবি।

 * চরিত্র গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদান।

 * আদর্শ নাগরিক গঠনের প্রকৃত উপায়-ইসলাম।

 * মানবীয় চরিত্র গঠনের একমাত্র উপায়-ইসলাম।

 * যে শিক্ষা পাচ্ছি- আর যে শিক্ষা চাই।

 * আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ ও তার প্রতিকার।

 * সহ-শিক্ষার কুফল।

 * ইসলামী শিক্ষাবস্থার রূপরেখা।

 * ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোণ।

 * ছাত্রশিবির কি চায়? কেন চায়? কিভাবে চায়?

 * আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

 * ছাত্রশিবির একটি গঠনমূখী ছাত্র আন্দোলন।

 * ছাত্র সমস্যা সমাধানে শিবিরের ভূমিকা।

 * আমাদের পাঁচ দফা (বৈজ্ঞানিক কর্মসূচিঃ ঈমানের দাবি)

 * ইসলামের প্রচার (দাওয়াত) মু’মিন জীবনের মিশন।

 * ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় একজন মুসলিম যুবকের ভূমিকা।

 * ইসলামী দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।

 * ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ মুসলমানের দায়িত্ব।

 * ইসলামী আন্দোলন কি এবং কেন?

 * ইসলামী আন্দোলন ঈমানের দাবি।

 * ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা।

 * ইসলামী আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজন।

 * ইসলামী সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা।

 * ইসলামী আন্দোলনে যুব শক্তির ভূমিকা।

 * উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলন-একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা।

 * বর্তমান বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্যের সম্ভাবনা।

 * বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ও শিবিরের আবির্ভাব।

 * বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস।

 * বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে ইসলামঃ একটি পর্যালোচনা।

 * আমাদের সমাজে সুসংস্কার ও বিদায়াতের অনুপ্রবেশ।

 * মুসলিম জাতির উন্নতির প্রকৃত পথ।

 * মুসলিম বিশ্বের মৌলিক সমস্যা ও তার সমাধান।

 * মুসলিম জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য।

 * মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের মূল সূত্র- ইসলাম।

 * ইসলামী রাষ্ট্র বনাম মুসলিম রাষ্ট্র।

 * ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও রাজনীতি।

 * ইসলামী রাষ্ট্রই সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র।

 * শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা একমাত্র ইসলামেই সম্ভব।

 * ইসলাম ও পুঁজিবাদ।

 * ইসলাম ও সমাজতন্ত্র।

 * ইসলাম ও সাম্প্রদায়িকতা।

 * গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ইসলাম।

 * ইসলাম ও প্রগতি।

 * ইসলাম ও প্রতিক্রিয়াশীলতা।

 * ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব।

 * তওহীদ ও বস্তুবাদের দ্বন্দ্ব।

 * মানবতার মৌলিক সমস্যা কি?

 * মানবতার মূল সমস্যা কি অর্থনৈতিক?

 * বস্তুবাদ নাস্তিকতারই অপর নাম।

 * বিজ্ঞান নাস্তিকতা ও বস্তুবাদকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণিত করেছে।

 * শ্রেণী সংগ্রাম- “সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বই পৃথিবীর ইতিহাস।”

 * সর্বহারার একনায়কত্ব নয়-খোদায়ী প্রভূত্বই মুক্তির একমাত্র পথ।

 * মানুষের উপর মানুষের প্রভূত্বই-সব জুলুমের মূল কারণ।

 * মার্কসীয় সাম্যবাদ-অবাস্তব কল্পনা।

 * ধর্ম ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব বিকৃত খৃষ্টবাদের পরিণতি।

 * “ধর্ম আফিমস্বরূপ”- একটি প্রতিক্রিয়াশীল ধারণা।

 * শ্রেণী হিংসা নয় মানবীয় মূলক্ষ্যবোধ উজ্জীবনই কল্যাণের প্রকৃত পথ।

 * মার্কসীয় অর্থনীতি একটি অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।

 * পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র দু’টি প্রতিক্রিয়াশীল প্রান্তিক ধর্মীয় মতবাদ।

 * মার্কসবাদ ও বাস্তবতার সংঘাত।

 * ইসলাম ও বিজ্ঞান একটি পর্যালোচনা।

 * যুগ-জিজ্ঞাসার দাবি-ইসলাম।

 * ইসলামী আক্কীদা

সংযুক্ত হতে পারে:

 * আমাদের সংগঠনের কাংঙ্খিত পরিবেশ

 * আনুগত্য, পরামর্শ ও এহতেসাব

 * আত্মগঠন ও মানউন্নয়ন

 * ব্যক্তিগত রিপোর্ট জীবন গড়ার হাতিয়ার

 * ইসলামী আন্দোলনের জন্য ক্যারিয়ার

 * বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়

 * আধুনিক যুগে দাওয়াতি কাজ/তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ

 * দ্বীনি পরিবেশ সংরক্ষণে দায়িত্বশীলের ভূমিকা

 * সংগঠন সম্প্রসারণ ও মজবুতি অর্জন

 * ক্যাম্পাসে দাওয়াতি কাজ

 * কর্মীগঠন ও জনশক্তি পরিচালনায় দায়িত্বশীলের ভূমিকা

 * আদর্শ উপশাখা গঠন ও সংগঠন পরিচালনায় দায়িত্বশীলের ভূমিকা

 * আমাদের ব্যবহারিক জীবন

 * স্কুল দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও কার্যকর পন্থা

 * আউটপুট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: সমস্যা ও সমাধান

 * বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া

 * আসহাবে রাসুলের জীবন কথা

 * ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনে সময় ব্যবস্থাপনা

 * বর্তমান বিশ্বে ইসলামী সমাজ বিনির্মান: সমস্যা ও সম্ভাবনা

 * দ্বীনি জ্ঞান,ক্যারিয়ার গঠন ও দক্ষতা অর্জন

সমাপ্ত

কর্মপদ্ধতিঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আইসিএস পাবলিকেশন

book স্ক্যান কপি ডাউনলোড